তোমার কন্যা কেহ বিবাহ করিবে না ইত্যাদি। কাজেই ফল এই হইয়াছে যে আমরা আর ভাবিয়া চিন্তিয়া কাজ করি না, যাহা ধারাবাহিকভাবে চলিয়া আসিতেছে তাহাই অনুকরণ করি—একবার প্রশ্ন করি না “কেন করিতেছি?” ইহার পর আবার গুরুবাদ আসিয়া সর্ব্বনাশ করিল। গুরু বলিলেন “আমার উপর অচলা আস্থা স্থাপন কর। কোন যুক্তিতর্ক বা প্রশ্ন করিও না। তাহা হইলেই উদ্ধার হইবে, মুক্তিলাভ করিবে।” গুরু তোমার চোখ বাঁধিয়া গলায় রজ্জু দিয়া টানিয়া লইয়া যাইবেন, তুমি তাহাতে কোন আপত্তি করিতে পারিবে না। একজন মানুষকে অভ্রান্ত মনে করিয়া তাহার আজ্ঞা পালনে নিজের যুক্তি বিবেচনা বিসর্জ্জন দিলে, আমাদের কার্য্যসমূহ যে যুক্তিহীনতার সহিত সম্পাদিত হইবে এবং তদ্বারা সমাজের অবনতি সংসাধিত হইবে সে বিষয়ে আর বিচিত্রতা কি আছে?
হিন্দুগণ! তোমরা যে সকল কঠোর নিয়ম পুনরায় সমাজে প্রবর্ত্তনের অভিলাষী হইয়াছ, একবার ভাবিয়া দেখ দেখি, সে নিয়ম সকল যদি তোমাদের পূর্ব্ব-গৌরবের দিনে প্রচলিত থাকিত, তাহা হইলে তোমাদের কিরূপ অবস্থা হইত? ভাব দেখি, যদি সত্যবতী নন্দন ব্যাসদেব ও তৎপুত্র মহাভাগবত শুকদেব গোস্বামীকে ধীবর কুলেই কালযাপন করিতে হইত, যদি চণ্ডালরাজ গুহকের মিত্র চণ্ডাল আলিঙ্গনকারী রঘুকুলপতি রামচন্দ্রকে জাতিচ্যুত হইয়া চণ্ডাল বংশেই বাস করিতে হইত, যদি গোপগৃহপালিত গোপান্নভোজী শ্রীকৃষ্ণকেও জাতিচ্যুত অবস্থায় থাকিতে হইত, তবে তোমরা হিন্দুধর্ম্মের গৌরব করিতে কি লইয়া?
এককালে ভারতবর্ষের উন্নতি হইয়াছিল—স্বাধীনচিন্তা ও স্বাধীন আচারের দ্বারা। আবার যদি ভারতের উন্নতি হয়, তবে তাহাও স্বাধীনচিন্তা ও স্বাধীন আচারের অনুষ্ঠান দ্বারাই হইবে। ভাবের দাসত্ব