পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্নসমস্যা
৪৩

কতজন বাঙ্গালীর ভাগ্যে তা জোটে? এ যজ্জীবনং তন্মরণম, মরণ সোহস্য বিশ্রামঃ” মরণ হলেই বিশ্রাম। শিশুকে চাম্‌চেয় করে মেলিন্‌স ফুড খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এরাই ত ভবিষ্যতে বংশবৃদ্ধি করে। কাজেই জাতটা যে ক্রমে স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়ছে তা আর বিচিত্র কি! আমাদের পিতৃপিতামহ ৭০।৮০ বৎসর বেঁচে থাক্‌তেন। এখন আমরা? ইংরেজের আয়ু গড়ে ৪৬ বৎসর, আমাদের মাত্র ২৩। দারিদ্র্য ও মহামারী আমাদের বুকের রক্ত শুষে বার করে নিচ্ছে! এদের তাড়াবে কে?

 বিপদ যখন একেবারে সমুখে এসে দাঁড়িয়েছে; জীবনসংগ্রাম যখন ভয়ঙ্কর কঠিন হয়ে উঠ্‌ছে, চারিদিকে সমস্যাগুলি যখন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে আস্‌ছে, তখন আমরা কি করছি? প্রায় নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে আছি। আমরা ভাবি না, বুঝবার চেষ্টা করি না। উপায় নির্দ্দেশ হলেও কার্য্যক্ষেত্রে অগ্রসর হবার উৎসাহ বা সাহস আমাদের থাকে না। আমরা সার বুঝেছি চাকরী করা, আর আমাদের ছেলেদের লক্ষ্য হয়েছে এম-এ এম-এস্‌সি পাশ করা, অথবা উকীল হওয়া। এখন একজন গ্রাজুয়েটের বাজার দর কত? এম্-এ বা এম্-এস্‌সি বড় জোর ১০০৲ পেতে পারেন, বি-এ বি-এস্‌সি ৪০৲ থেকে ৫০৲ টাকা। কিন্তু এর সঙ্গে বিবেচনা কর্‌তে হবে যে একটি পদ খালি হলে তার জন্যে পাঁচশ দর্‌খাস্ত পড়ে। সুতরাং এই সিদ্ধান্ত হয় যে গড়ে গ্রাজুয়েটের বিশেষ কোন সুবিধা পাবার জো নেই। পাঁচ বৎসর বয়স থেকে A. B. C. D. আরম্ভ করে ২২।২৩ বৎসর পর্য্যন্ত ম্যালেরিয়া ও নানারোগের অত্যাচারে উৎপীড়িত হতে হতে ভগ্নস্বাস্থ্য বাঙালী যুবক যখন স্কুল কলেজ পার হয়ে ডিগ্রী নিয়ে সংসারের সমুখে এসে দাঁড়ান তখন দেখেন তাঁর পুঁথিগত বিদ্যা জীবন-সংগ্রামে কোথাও তাঁকে বিশেষ কোন সাহায্য কর্‌বে না।