পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্নসমস্যা
৫৭

তার বিরুদ্ধে আমি যত কথাই বলি না কেন, প্রকৃত উচ্চশিক্ষা লাভ ক’রে চিত্তোৎকর্ষ সাধন করা চাই। লেখাপড়া চাই, গণ্ডমূর্খ হলে কিছুতেই চল্‌বে না। কিন্তু অকর্ম্মণ্য ডিগ্রীধারী হয়ে কোন লাভও নেই, গৌরবও নেই। আমাদের পোড়া কপাল যে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের “ছাপ”কে অন্নসংস্থানের একমাত্র উপায়—“নান্যদস্তি” ব’লে জ্ঞান কর্‌চি। এই ধারণাটা ভূতের মত আমাদের ঘাড়ে চেপে আছে—কিছুতেই নাম্‌তে চায় না।

 এই ধরুন বি-এল পাশ ক’রে ওকালতি করা। ছেলেদের ও-একটা বাঁধা গৎ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে যাই—জেলা মহকুমা, জজ বা মাজিষ্টরের সকল রকমের আদালত-সব জায়গাতেই উকিলের সংখ্যা মক্কেলের দশগুণ, কোথাও বা বিশগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই উকীল হলেও পয়সা রোজগার হচ্ছে না। কিন্তু তবুও বিএ পাশ ক’রেই বাঙালী যুবক আইন পড়তে ছুট্‌চেন। পালে পালে, দলে দলে, সকালে বিকালে আইন পড়া চলেছে। “পাশটা ক’রে রাখা যাক্”—আইন পড়্‌বার এই একমাত্র নজীর আছে। কিন্তু যেখানে প্রয়োজনের চেয়ে আয়োজনের আড়ম্বরটা অধিক, সেখানে আয়োজন যে অনেক পরিমাণে ব্যর্থ হবে এ ত স্বতঃসিদ্ধ কথা। “সর্ব্বমত্যন্ত গর্হিতম্।” আইন পড়ো না—আর দরকার নেই—এমন কথা বলি না। কিন্তু এই কথা বলি— যার কাট্‌তি নেই, আদর নেই, গুমোর নেই, যা গুদামজাত হয়ে প’ড়ে থেকে পচে, সে জিনিষের আবাদ যেমন বন্ধ রাখা ভাল, আইন পড়াও সেই যুক্তিরই বলে স্থগিত রাখা বা বহুল পরিমাণে কমিয়ে দেওয়া দরকার নয় কি? আইনজ্ঞেরা আমার শত্রু এমন উৎকট অদ্ভুত কথা আমি বলিনি। বাঙালার ব্যবহারজীবিদের নিকট আমাদের ঋণ অপরিশোধ্য। মনোমোহন ঘোষ, লালমোহন