মাট্রিকুলেশনে ছাত্রের সংখ্যা প্রত্যেক বৎসরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, বুদ্ধিমাত্রেই কি স্বাস্থ্যের লক্ষণ? দেশে জ্ঞানতৃষ্ণা বাড়্ছে এই ভেবে অনেকেই আশ্বস্ত হন। কিন্তু এ কি স্বাস্থ্যকর তৃষ্ণা? অথবা বিসূচিকার তৃষ্ণার মত ভয়ঙ্কর! আমি অনেক সময় পাড়াগাঁয়ে গিয়ে থাকি। বাগেরহাট অঞ্চলে গিয়ে দেখেছি সেখানে শুধু কায়স্থ ব্রাহ্মণ বৈদ্য নয়, নমঃশূদ্র মাহিষ্য বারুইদের মধ্যে লেখাপড়া শিখবার আগ্রহ বেড়ে চলেছে। বেশ কথা। কিন্তু এই জ্ঞানতৃষ্ণাই, অস্বাস্থ্যের লক্ষণ হ’য়ে দাঁড়ায়, যখন প্রত্যেক মাট্রিকুলেট কলেজে প্রবেশ লাভ কর্বার জন্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ছুটাছুটি কর্তে থাকে। কলেজে স্থানাভাব। অথচ মাট্রিকুলেশন পাশ ক’রে প্রত্যেককে কলেজে পড়তেই হবে—কেন না আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ছাপটা’কে জীবিকার্জ্জনের একমাত্র উপায় ব’লে ধ’রে নিয়েছি। অন্য কোন উপায়ে যে অন্নসংস্থান হ’তে পারে এ ধারণা আমাদের নেই বল্লেই চলে। কাজেই কোন রকমে পয়সা-কড়ির যোগাড় ক’রে (দরিদ্রা বিধবা মা-মাসীর গহনা বাঁধা দিয়ে) ছুটে চল ঐ কলেজের দিকে। সেখানে ঠেসাঠেসি ঘেঁসাঘেসি; তবু ছেলেরা ছুটে চলেছে—সম্মুখে গিয়ে বস্বে; ধাক্কাধাক্কিতে প’ড়ে কেউ মারাই বা যায়! ৪০ মিনিটে পিরিয়ড্ দলে দলে ছেলেরা সকালে বিকালে উপরে নীচে পাতালে, সব জায়গাতে পড়াশোনা করছে। ছাত্রদের জ্ঞানলাভে তেমন কোন আগ্রহ নেই—কোনরকমে নোট মুখস্থ ও পার্সেণ্টেজ, রক্ষা ক’রে ডিগ্রী পেলেই বস খুসী। তারা কলেজের পাঠ্যপুস্তকের অতিরিক্ত কোন বই পড়বে না, কারণ পাশ কর্বার জন্যে সে সকল পাঠ কর্বার কোন আবশ্যক নেই। কোন নূতন কথা নয়, কোন অবান্তর কথা নয়—শুধু নোট দাও আর লাল নীল সবুজ পেন্সিলে সব দাগ দিয়ে নিতে বল। পরীক্ষা
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৯৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী