যারা উঁচু জাত, দরিদ্র হলেও তারা কৃষিশিল্প বা বাণিজ্যের দিকে ঘেস্তে চান না; সমাজে আভিজাত্য নষ্ট হবে এই কথাটা কুসংস্কার; আজ জাতিভেদের কঠোরতা কতকটা শিথিল হলেও, এখনও তাঁদের ঘাড়ে চেপে আছে। আপনারা সকলেই জানেন হিন্দুদের মধ্যে যাঁরা উচ্চ জাতি তাঁরাই অপরের চেয়ে লেখাপড়ায় অধিক অগ্রসর হয়েছেন। বাঙ্লাদেশে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্যেরাই সর্ব্বাপেক্ষা অধিক শিক্ষিত। মান্দ্রাজে আয়ার ও আয়েঙ্গারগণ এবং মহারাষ্ট্রে তিলক, গোখলে, পরঞ্জপে, ভাণ্ডারকর, চন্দাভরকর, এবং চিৎপাবন ব্রাহ্মণগণ বিদ্যাশিক্ষার আলোক অনেক পরিমাণে লাভ করেছেন। কিন্তু এঁরা সকলেই কেরাণী বা শিক্ষক অথবা উকীল এবং ডাক্তার। চাক্রীর ক্ষেত্রে উঁচু জাতের বাঙালী ও মান্দ্রাজীর মধ্যে প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়েছে। বাঙালী গ্রাজুয়েট্ যদি বা ৩৫৲ টাকা চান, মান্দ্রাজী গ্রাজুয়েট্ ৩০৲ টাকায় খুসী। বাঙালী শাকের সঙ্গে দুটো চিংড়ী মাছ ফেলে ঘণ্ট করেন, আর মান্দ্রাজী ভাতের সঙ্গে একটু তেঁতুলের জল পেলেই তুষ্ট। আজ চালের মণ ১১৲ টাকা, মাছের সের ১৲ টাকা। কাজেই উপবাসে আমরা মারা যাচ্ছি। আমাদের যে স্কুলকলেজের লেখাপড়া শেখা, সে শুধু চাকুরীর জন্যে। উচ্চজাতীয় শিক্ষিত লোকেরা ব্যবসায়ে যেতে অনিচ্ছুক—দ্বিধাবোধ করেন। বহুকাল পূর্ব্বে জাপান ও ফ্রান্সের অবস্থা কতকটা এইরূপ ছিল। অভিজাত বংশের কেউ ব্যবসা বাণিজ্যে প্রবৃত্ত হতে চাইতেন না। সেদিন তাদের কেটে গেছে—আমাদের কিন্তু কাটেনি। আজ য়ুরোপ ও জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে চলেছে, তার কারণ শিল্প ও বাণিজ্য প্রসার লাভ কর্ছে এবং ছাত্রেরা সেই সকল বিষয়ে শিক্ষালাভ করবার জন্যে উত্তরোত্তর আগ্রহ প্রকাশ কর্ছে! আর আমাদের দেশেও ছাত্রসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু কারণটা কি? বলা শক্ত। চাক্রীর ক্ষেত্র
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৯৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী