যাত্রীই ভাবছিল আমেরিকার দ্বার তাদের কাছে খুলবে কি? দুটো দিন আমার আরামেই কেটেছিল। আমার ঠিক বিশ্বাস ছিল, অন্তত কয়েক দিন ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকতেই হবে। আমি হিন্দু বলে নয়, আমার চামড়া কালো বলে। এক শ্রেণীর আমেরিকান আছে, যারা হিন্দু শব্দটার উচ্চারণেই মোহিত হয়ে যায়। আমি কালো তাই ভাবছিলাম আমাকে হিন্দু বলে গ্রহণ করলেও বেঁচে যাই। কিন্তু তার সম্ভাবনা অতি অল্প। দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেল। আজই বিকালবেলা জাহাজ নিউইয়র্ক গিয়ে পৌঁছবে। আমি জাহাজের খালাসী থেকে পারসার এবং পারসার থেকে কাপ্তেন পর্যন্ত সকলের সংগে কথা কয়ে নিয়ে ডেকে গিয়ে বসলাম। উদেশ্য, নিউইয়র্ক নগরীর সামুদ্রিক ট্রাফিক দর্শন।
অনেক জাহাজ বন্দর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আবার আমরা যেমন বন্দরের দিকে অগ্রসর হচ্ছি তেমনি আরও অনেক জাহাজ বন্দরের দিকে আসছিল। হাতের ঘড়িটার দিকে চেয়ে দেখলাম, দুই ঘণ্টার মধ্যে তেত্রিশটি জাহাজ বেরিয়ে গেল। আর যতদূর দৃষ্টি যায়, গুনে দেখলাম পঁয়তাল্লিশটা জাহাজ বন্দরের দিকে আসছিল। এত জাহাজের আনাগোনা পৃথিবীর অল্প বন্দরেই হয়। সাউথহামটন, ডোভার তথা লণ্ডন, সিংগাপুর, ইওকোহামা এবং হামবার্গে প্রায় এই রকম সামুদ্রিক ট্রাফিকের নমুনা দেখা যায় বললে দোষ হবে না। তবু মনে হল নিউইয়র্কের মত সমুদ্র ট্রাফিক আর কোথাও নাই। যাঁরা সঠিক হিসাব নিতে চান, তাঁরা নৌবিভাগের চার্ট দেখবেন। কলকাতার পোর্ট কমিশনারের দয়া না হলে বোম্বাইয়ে লিখলে নিশ্চয়ই চার্ট পাওয়া যাবে।
জাহাজ ক্রমশই নিউইয়র্ক নগরীর কাছে আসতে লাগল। নানা