ইউরোপীয়ান সকলেই তাঁকে পথ ছেড়ে দিয়ে টুপি খুলে সম্মান জানাতে লাগল। তাঁর পথ পরিষ্কার, তাঁকে আর লোক ঠেলতে হল না। আমার কাছে আসা মাত্র আমিও দাঁড়িয়ে জোড় হাত করে তাঁকে নমস্কার করলাম। আমরা যেমন করে ‘বন্দেমাতরম্’ গান গাইবার সময় দাঁড়াই বা ইংরেজেরা যেমন করে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গায়, ইমিগ্রেশন অফিসাররা ঠিক তেমনি করে সবাই একসংগে তাঁকে সম্মান দেখাতে দাঁড়ালেন।
মহিলাটির এত সম্মানের কারণ প্রথমে ঠাহর করতে পারি নি। যাইহোক তিনি আমাকে বললেন যে, তিনি শ্রীযুক্ত উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মহাশয়ের চিঠি পেয়েছেন এবং আমাকে নিয়ে যাবার জন্যই এসেছেন। তিনি আরও বোধহয় কিছু বলতেন, কিন্তু একজন ইমিগ্রেশন অফিসার টেবিলের কাছ থেকে উঠে এসে তাঁকে ডাকলেন এবং আমার সংগে কোনও কথা বলতে নিষেধ করলেন। মহিলাটি যতক্ষণ না কোনও আসন গ্রহণ করলেন সব ইমিগ্রেশন অফিসারই ততক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। কমলাদেবী মুখোপাধ্যায় আসন গ্রহণ করেই অফিসারের সংগে নানা কথা আরম্ভ করলেন। তারপর আমার কথা উঠল। কমলা দেবী বললেন, তিনি যে সাপ্তাহিক পত্রের লেখিকা, আমিও সেই সাপ্তাহিক পত্রে লিখে থাকি এবং সেই সুত্রেই আমার সংগে তাঁর পরিচয়। তারপর আর কি কথা হল তা আমি শুনতে পাই নি, কারণ আমাকে দূরে গিয়ে বসতে বলা হয়েছিল। শেষ কথা শুনলাম “ও, কে,” তারপরই পাসপোর্টে সিলমোহর পড়ল এবং অফিসাররা ‘ও, কে,” উচ্চারণ করে একসংগে দাঁড়িয়ে তাঁকে বিদায় দিলেন। কমলাদেবী আমার হাত ধরে বার হয়ে পড়লেন। আমি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।
আমার লগেজ পরীক্ষা করা হল, তারপর আমরা একটা বড় পথে