আনন্দের লীলাভূমি, টাকার আড়ত নিউইয়র্ক-এ এসে রাত্রি দুটা পর্যন্ত পথে হেঁটে বেড়ালাম। কেউ আমাকে লক্ষ্য করেনি, সকলেই ব্যস্ত। এত বড় নগরে কে কার সন্ধান রাখে? তাতে আমি আনন্দিতই হলাম। আমার আকৃতি অনেকটা নিগ্রোদের মত। নিজের পরিচয় কারও কাছে দিলাম না আর পরিচয় দিবার প্রয়োজনও ছিল না। হাতে টাকা আছে, পেট ভরে খাবারের বন্দোবস্ত আছে, এবং আমেরিকার সুখ-দুঃখের সংবাদ নেবার মত ক্ষমতা আছে। আমি যদি অপরিচিত হয়ে বেড়াই তবে দুঃখ করার কি আছে? একটি পুরান কথা মনে পড়ে গেল। আমার গ্রামের একটি লোকের সংগে একবার কলকাতায় দেখা হয়। তার পরনে মাত্র একখানা ধুতি, গায়ে একটা গেন্জি আর ট্যাঁকে কতগুলি পয়সা। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এভাবে ঘুরে বেড়াবার কারণ কি। গ্রামে তো কখনো এভাবে থাকতে দেখিনি। লোকটি বলেছিল, “কলকাতা দেখতে এসেছি, দেখে চলে যাব। জাঁকজমক করে চোরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লাভ কি?” আমিও নিউইয়র্কে প্রায় দু’সপ্তাহ সেইভাবেই কাটিয়ে ছিলাম। তাতে দিন কেটেছিল ভালই। কেমন করে ভালভাবে দিন কেটেছিল তার একটা দৃষ্টান্ত দিলাম।
হারলামে নিগ্রোরাই থাকে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ওয়ার্ল্ড-ফেয়ারের তরফ থেকে নানারূপ প্রচার চলছিল। সেখানে রুশিয়ারও একটি প্যাভেলিয়ন খোলা হয়েছিল। সেই প্যাভেলিয়নটি দেখার জন্যই তথায় গিয়েছিলাম। রুশিয়ার প্যাভেলিয়ন দেখবার জন্য লোক আগ্রহান্বিত ছিল। সেখানে নিগ্রোদের কাছে সস্তা দরে খাদ্য বিক্রয় করা হ’ত কারণ নিগ্রোরা আমেরিকানদের মত মোটা মজুরী পেত না। যে সকল খাদ্য আমেরিকানদের কাছে পন্চাশ সেণ্টে বিক্রি হত সেই