পিঠে হাত বুলিয়ে বলত, তোমাদেরও কাজ করার ক্ষমতা আছে, কাজ কর, দেখবে তোমাদের দেশেও সোভিয়েট রুশের মত কিছু গড়ে উঠেছে তখন তাদেরও মনে চাঞ্চল্য এসে দেখা দিত।
সোভিয়েট প্রদর্শনীতে বড় বড় চিত্রপট এবং কিউরিয়োর কোনরূপ জাঁকজমক ছিল না। প্রদর্শনীটাকে দূর হতে যেন একটা বিরাট কিছু দাঁড়িয়ে আছে বলেই মনে হ’ত। বাড়িটার চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে মাটির তৈরী একটা প্রকাণ্ড মানুষের মূর্তি। তার ডান হাতে একটা জলন্ত মশাল। মূর্তিটির মুখ এমনি ভাবে গঠন করা হয়েছে যে দেখলে মনে হয় যেন সেই মাটির মানুষ বলতে চাচ্ছে―“গরিবের দল এবং সর্বহারাগণ, আর ভুলে থাকিস না, ভিক্ষা করে আর কোন দরকার নাই, এবার তোদের পাওনা বুঝে নে।”
সোভিয়েট প্রদর্শনীতে সিনেমারও আয়োজন ছিল। রুশ দেশের সিনেমার সংগে অন্য কোন দেশের সিনেমার মোটেই মিল নাই বললে কোন দোষ হয় না। রুশ সিনেমায় পুরাতন ঐতিহাসিক ঘটনার উপর সত্যের দীপ্তি ফুটে উঠছিল। কোথাও কিছু লুকিয়ে রাখবার চেষ্টা করা হচ্ছিল না। সিনেমায় দেখান হচ্ছিল, জারের আমলে এক টুকরা রুটির জন্য পুত্রকন্যার সামনে কি করে মাতা তার শরীর বিক্রয় করছেন আর কেমন নিঃসংকোচে পুঁজিবাদীর দল সেই মাতার প্রতি কুব্যবহার করছে; যুবক যুবতীরা অন্নচিন্তা করে অকালে কিরূপে বার্ধক্য পেয়েছে। সে সব করুণ দৃশ্য অনেকক্ষণ দেখবার মত পাষাণ মন অনেকেরই ছিল না। অনেকে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠছিল আর জারের নামে নানারূপ কটূক্তি বর্ষণ করছিল। ইহুদী এবং যারা অখৃষ্টান তাদের প্রতি কত অত্যাচার চলছিল তার দৃশ্যও দেখান হ’ত, কিন্তু সেই দৃশ্য দেখে কেউ কাঁদত না শুধু গম্ভীর হয়ে ভাবত। আমিও ভাবতাম। ভাববার বিষয়ই বটে।