লাগছিল না। এমনি যখন মনের অবস্থা তখন জর্জিক জাহাজের একজন অফিসার এসে হাজির হলেন। তাকে দেখেই চিনতে পারলাম; তিনিও আমাকে চিনতে পারলেন। দুজনায় একটু কথা হল, তারপর তিনি আমাকে ‘কমরেড’ রূপে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সকলের মুখের ভাব বদলে গেল। এইবার আমার পালা। মোল্লা মহারাজের দিকে তাকিয়ে বললাম, “এমন অশিষ্টাচার করে মানুষকে দলে টানা যায় না। লোককে রাগাতে নাই, বুঝাতে হয়। লোক বুঝুক, তারপর আপনিই দলে আসবে। যারা বুঝেও আসবে না, আজ আমার জন্য যে ব্যবস্থা করেছিলেন সেই ব্যবস্থা তাদের জন্য করতে পারেন। ধর্ম প্রচার এবং কমিউনিজম প্রচার এক নিয়মে হয় না। মনে রাখবেন, ধর্মপ্রচারের পিছনে রাজশক্তি থাকে, কিন্তু কমিউনিজন প্রচারের পিছনে রাজশক্তি থাকে না। কাজেই এরূপ ক্ষেত্রে, কাজে সফল হতে হলে ধৈর্যের দরকার, সাহসের দরকার, সহিষ্ণুতার দরকার। মোল্লা সাহেব, যাকে দলে টানবেন তাকে বন্ধু বলে পরিচয় দিবেন, শত্রু বলে নয়।”
অনেক কথা বলে গভীর রাত্রে যখন ফিরছি, মোল্লা সাহেব আমাকে তখন জিজ্ঞাসা করলেন, “দেশের লোক কি এখনও বোঝে না যে, তাদের সুখ-শান্তি নাই, সুযোগ-সুবিধা নাই?” আমার বলার মত আর কিছুই ছিল না। সবিনয়ে মোল্লা মহাশয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলাম। পরের দিন একশত আট স্ট্রীটের পূর্বদিকে একটা রুম ভাড়া করে চলে গেলাম। এখানে সবাই সাদা। সাদা লোকের কাছে না থাকলে নানারূপ অসুবিধা হয়। এখানে এসেই নিজের পরিচয় দিয়ে, নানারূপ বিষয় জানবার সুযোগ পেয়েছিলাম। স্থান পরিবর্তন করার পরই এমন অনেক লোকের সংগে দেখা হল যাতে নিউইয়র্কে পথ প্রদর্শকের অভাব হল না।
৬