পাতা:আজাদী সৈনিকের ডায়েরী - মুলকর.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদী সৈনিকের ডায়েরী
২৫

করিতেছে। বুদ্ধদেবের মূর্ত্তির সম্মুখে সারি সারি মোমবাতি জ্বলিতেছে। ফুঙ্গী ঘণ্টা বাজাইয়া জয়মঙ্গল গাথা পাঠ করিতেছেন। জগদ্ব্যাপী এই মহাযুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বুদ্ধদেবের মুখ তেমনি অচঞ্চল—অধরে তেমনি রহস্যময় হাসি। পূজারীগণের কণ্ঠে ধ্বনিত হইল অহিংসার অবতার বুদ্ধদেবের প্রতি আনুগত্য—বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি—ধম্মং শরণং গচ্ছামি। কিন্তু একা ব্রহ্মের নরনারী শরণ লইলে কি হইবে? যতদিন না সারা জগৎ অহিংসা মন্ত্রে ব্রতী না হয়, ততদিন যুদ্ধ চলিবে—সাইরেন বাজিবে—বোমা পড়িবে—মানুষ পতঙ্গের ন্যায় মরিবে।

 ফুঙ্গীর অনুগ্রহে এক বর্মীর গৃহে আশ্রয় মিলিল। এই বিপদের সময় এই পরিবার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের যেভাবে অতিথি সৎকার করিয়াছিলেন তাহা আমার চিরদিন মনে থাকিবে। বাড়ীর কর্ত্তার নাম মঙ্গ্ মায়া।

 ফুঙ্গী আমাদের মঙ্গ্‌মায়ার বাড়ীতে পাঠাইয়া দিলেন। ভদ্রলোক দরজায় অপেক্ষা করিতেছিলেন। আমরা যাইতেই হাসিমুখে বলিলেন—‘লা গে ছেয়া’ (মহাশয়, আসুন)। আমার বর্মী ভাষার সামান্য জ্ঞান কাজে আসিল। নাথুভাই ও চাঁদ সিং বর্মী ভাষায় অনভিজ্ঞ।

 রাত্রে তাহার স্ত্রী পরিবেশন করিলেন। বেশ সুশ্রী চেহারা; পরণে সিল্কের লুঙ্গী; মুখে তানাখা মাখা। খাবার মিলিল—ভাত, ডাল ও পাঁপর ভাজা। আজ তিনদিন পরে ভাত খাইতেছি। রান্না যেমনই হোক তৃপ্তির সঙ্গে খাইলাম।

২৬শে ফেব্রুয়ারী ১৯৪২: প্রোম্‌:

 প্রোমে আসিয়া আজ চারদিন বসিয়া আছি—ইরাবতী নদী পার হইবার কোন উপায় হইল না। একটা স্টীমার কালো ধোঁয়ায় আকাশকে