পাতা:আজাদী সৈনিকের ডায়েরী - মুলকর.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
আজাদী সৈনিকের ডায়েরী

উঠিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি হিন্দীতে বলিলেন—স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রগঠনের কথা। জনতা মন্ত্রযুদ্ধের ন্যায় তাঁহার বক্তৃতা শুনিল।

 তিনি বলিলেন—আমাদের স্বাধীনতা আসন্ন। প্রত্যেক ভারতবাসীর কর্ত্তব্য একটি জাতীয় গভর্ণমেণ্ট স্থাপন এবং সেই গভর্ণমেণ্টের নেতৃত্বে দেশকে মুক্ত করা। আজ ভারতে জনসাধারণ নিরস্ত্র এবং নেতারা কারাগারে বন্দী; সুতরাং ভারতে ইহা সম্ভব নয়। আজ পূর্ব এশিয়ার ভারতীয় অধিবাসীবৃন্দ তাই আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্ট গঠন করিয়াছেন দেশকে স্বাধীন করিবার জন্য।

 নবগঠিত আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্টের মন্ত্রীদের নাম ঘোষণার পর সুভাষচন্দ্র শপথ গ্রহণের জন্য উঠিলেন। দৃঢ়কণ্ঠে তিনি শপথ পাঠ করিতে লাগিলেন।

 ‘আমি ভগবানের নামে শপথ গ্রহণ করিতেছি যে আমি আমার জীবনের শেষমুহূর্ত্ত পর্য্যন্ত ভারতবর্ষের এবং আমার ৩৮ কোটি স্বদেশবাসীর স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করিব।

 এইখানে ভাবাবেগে তাঁহার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হইয়া গেল। স্থিরভাবে প্রস্তরমূর্ত্তির ন্যায় মাইক্রোফনের সম্মুখে দণ্ডায়মান স্বাধীনতার মূর্ত্ত প্রতীক সেই মূর্ত্তির স্মৃতি আজীবন আমার স্মৃতিপটে অঙ্কিত থাকিবে। জনতা নিস্তদ্ধ।

 তারপর আবার তিনি বলিতে আরম্ভ করিলেন—

 ‘আমি আজীবন ভারতের সেবা করিব এবং আমার ৩৮ কোটি ভ্রাতা ও ভগ্নীদের মঙ্গলের প্রতি দৃষ্টি রাখিব। ইহাই হইবে আমার শ্রেষ্ঠ কর্ত্তব্য।”

 জনতা উচ্ছ্বসিতকণ্ঠে চীৎকার করিল—‘সুভাষচন্দ্র বসু কি জয়’—‘আজি হুকুমৎ আজাদ হিন্দ কি জয়’।