পাতা:আজাদী সৈনিকের ডায়েরী - মুলকর.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদী সৈনিকের ডায়েরী
৯১

২৮শে জানুয়ারি ১৯৪৪:

 রেঙ্গুনে আজাদ হিন্দ্ ফৌজের এক বিরাট বাহিনীর সমাবেশ হইয়াছে। প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য নানা দেশ হইতে আসিয়াছে।

 সৈনিকদের মধ্যে উৎসাহ দেখিলাম! সে সত্যই স্বপ্নের অতীত। ভারতের সামরিক জাতিগুলি যুদ্ধ করে, কারণ যুদ্ধই তাহাদের পেশা; তাহারা যুদ্ধ করে কোন উচ্চ প্রেরণার বশবর্ত্তী হইয়া নয়—নিমকের অর্থাৎ বেতনের জন্য। এই সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা বা দেশের প্রতি ভালবাসা কোনদিন ছিল না বলিলেই হয়। ইহারা নিমকের জন্য দেশীয় রাজাদের হইয়া বিদেশী আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে লড়িয়াছে; আবার ইহারাই বিদেশীকে নিজের মাতৃভূমি জয়ে সাহায্য করিয়াছে। এই মোহগ্রস্ত প্রাণগুলির মধ্যে এক নব উন্মাদনা জাগাইয়া তুলিয়াছেন নেতাজী।

 ভারতে হিন্দু ও মুসলমানে—আবার হিন্দুর মধ্যে জাতিতে জাতিতে বিভেদ রহিয়াছে। কিন্তু যুগে যুগে পুঞ্জীভূত সাম্প্রদায়িক ও শ্রেণীগত সেই ভেদাভেদ এখানে যেন এক যাদুমন্ত্র বলে অদৃশ্য হইয়াছে। আজাদ হিন্দ্ বাহিনীর সৈনিকগণ ভুলিয়া গিয়াছে—তাহারা হিন্দু, মুসলমান, শিখ বা খৃষ্টান—তাহারা এক দেশ-মাতার সন্তান—পরম্পর ভাই-ভাই।

 সেনাবাহিনীর মধ্যে ছোট বড় ভেদ নাই। সাধারণ সৈনিক ও অফিসার সকলেই আহার করেন এক জায়গায়। নেতাজীর বেশ সাধারণ সৈনিকের ন্যায়; সকলের সঙ্গে তিনি সমান ভাবে মিশেন।

 সৈনিকদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস নেতাজীর নেতৃত্বে তাহারা দেশকে মুক্ত করিতে পারিবে—জয় তাহাদের হইবেই। আমরা পরস্পরকে অতিবাদন করি—নমস্তে বা সেলাম বলিয়া নয়; বলি—‘জয় হিন্দ’—