পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অদ্ভুত ম্যালেরিয়া-পূর্ণ কৃষ্ণের জীবভাবে ১৮৬৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলাম, পূর্বেই বলিয়াছিল, সে সকল কথা কিছু বলিব না। তবে এই দশ বৎসর কালের মধ্যে, বাঙ্গালা সাহিত্যের কি শিক্ষা পাইলাম, তাহা বলা কর্ত্তব্য মনে করি। তখন বাঙ্গালায় সঙ্গীত বলিয়া একটা জীবন্ত জিনিস ছিল । কবির গান নিস্তব্ধ ও ত্রিয়মাণ হইয়াছিল বটে, কিন্তু যাত্রা পাঁচালী খুব আসর। জমকাইয়া বসিয়াছিল। আমাদের পাড়াতেই পাঁচালীর দল ছিল। আর চুচুড়া ফরেসডাঙ্গায় যাত্রা, পাঁচালীর আড়ৎ ছিল। তাহা ছাড়া পথে ঘাটে সর্বদাই লোকে গান গাহিতে গাহিতে যাইত ; রাত্রিতে তা বটেই। পড়িবার সময় ছাড়া, অন্য সময়ে, চারিদিক চাহিয়া দেখা ও সকল কথা কাণ খাড়া করিয়া শুনা, আমার অভ্যাস হইয়াছিল । বহুতর বাঙ্গালা গান আমার মুখস্ত হইয়াছিল। রাত্রি জাগরণ করিয়া যাত্রা শুনা,-বৎসরে দুই দিন ও শুনিতাম না। এমনি দিবা ও সান্ধ্য গানে, আমার মগজ ভরপুর ছিল। পূর্বেই বলিয়াছি, হুগলি কলেজে বাঙ্গালা শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল । সেই ব্যবস্থা হইতে উপকার লাভ করিবার আমার ক্ষমতা হইয়াছিল । আমি উপকৃতও হইয়াছিলাম। আমরা পড়িতাম ‘সুখবোধ ব্যাকরণ।” এই ব্যাকরণের কথা, শ্রীযুক্ত রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী, একটা প্রত্ন-তত্ত্ব-প্রবন্ধে সন্নিবিষ্ট করিয়াছেন । শত শত বালক ঐ ব্যাকরণ যে কণ্ঠস্থ কিরিত, তাহা বোধ হয় ত্রিবেদী কখন শুনেন নাই । ত্রিবেদী-গ্রন্থকারের নাম লিখিয়াছেন-শ্রীভগবান চন্দ্র সেন । ঠিক কথা, কিন্তু ১৮৫৭ সাল হইতে মুদ্রিত পুস্তকে 'শ্রীভগবৎচন্দ্র বিশারদ-প্রণীত’ বলিয়া ছাপা হইয়াছে। এই ভগবানচন্দ্র সেন বা ভগবৎচন্দ্র বিশারদের কাছে, আমরা এনট্রান্স ক্লাসে ১৮৬২ সালে পড়িয়াছিলাম । আর তাহার ব্যাকরণ সমস্ত কিশোর জীবনে অভ্যাস করিয়াছিলাম। সুখবোধ হইতে যে কৃৎ, তদ্ধিত, ও স্ত্রীত্ব পড়িয়াছে, তাহাকে বাঙ্গালা লেখায় হঠাৎ ব্যাকরণে ঠকিতে হয় না । হুগলী কলেজের নীচের ক্লাসে কয়েকজন ভাল ভাল পণ্ডিত ছিলেন । এখনকার প্রসিদ্ধ বিপিনবিহারী গুপ্তের পিতা ৬/গোবিন্দ গুপ্ত তন্মধ্যে একজন । স্কুলে ভর্ত্তি হইয়াই, তঁহার হন্তে পড়িলাম। তিনি বড় সৎ শিক্ষক ছিলেন । । তাহার কাছে আমি বিশেষরূপে ঋণী । সেইরূপ হরচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের কাছেও ঋণী । ভগবৎচন্দ্রের নাম পূর্বেই করিয়াছি। তঁহার উপর ছিলেন গোবিন্দচন্দ্র শিরোমণি । ইহার নিকট আমি মুগ্ধবোধ শিক্ষা করিতাম। তিনি অগ্রে হেড পণ্ডিত ছিলেন, পরে প্রফেসর হন । পিতৃদেবও তাহার নিকট কলেজে পাঠ করিয়াছিলেন। আমরা দুই পুরুষে, তাহার নিকট ও প্রসিদ্ধ প্রফেসর ঈশানচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের নিকট ঋণী । সংস্কৃত বাঙ্গালার জন্য আর আমি ছাত্র জীবনে শেষ ঋণী-৬৮ গোপালচন্দ্র গুপ্তের নিকট ও শ্রীযুক্ত নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের নিকট। সকলেই জানেন, তিনি এখন কলিকাতা SW