পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভালবাসি বলিয়া, আমার শরীরে জালা লাগে নাই৷ ” এই অভিনয় রঙ্গে ৭৮টি গান ছিল ; দুই একটি আমার কৃত ; আর অনেকগুলি সঞ্জীববাবুর রচিত। তাহার একটি উল্লেখ করা আবশ্যক। এক সময়ে এই গানটি আমি বৈদ্যনাথ, বহরমপুর, নাটোর, কলিকাতা এবং আমাদের অঞ্চলে সমানে গাহিতে শুনিয়াছি । পিলু, যৎ । “অ্যাগে যদি জানিতাম কপাল আমার, দলিতম আশালতা অক্ষুরে তাহার { যত পেলে আঁখি জল, তত সে হ’ল প্রবল, এখন লতা ভরে-তরু মরে সে. করে বিহিত তার ?” বোধ করি, ১৮৭২ সালের গুড ফ্রাইডের সময় চুচুড়ার প্রসিদ্ধ মল্পিক বাড়ীতে লীলাবতীর প্রথম অভিনয় হইল । কলিকাতা ঠাইতে দীনবন্ধুবাবু প্রভৃতি, যশোহর হইতে পিতা প্রভৃতি, ভাটপাড়া হইতে ভট্টাচার্য্যগণ, কঁটালপাড়া হইতে সঞ্জীববাবু প্রভৃতি, আমাদের স্বগ্রামের মহারাজ দুর্গাচরণ লাহা প্রভৃতি শূরবীর রখীগণ শ্রোতা। বঙ্কিমবাবু গুড ফ্রাইডের ছুটি পাইয়াও আসিতে পারেন নাই। বাগবাজারের নীলদর্পণের দল অর্থাৎ অমৃতলাল বসু প্রভৃতি তাহারাও নিমন্ত্রিত শ্রোতা । খুব চুটিয়ে অভিনয় হইল ; তখন থিয়েটারে “কীর্ত্তন” প্রবেশ করে নাই, আমরা লীলাবতীর মুখে খাটি মনোহর সাহী সুর লাগাইয়াছিলাম।-- "কে বলে গোকুলে আমার কানাই নাই ? আমি সতত। তার অঙ্গের সৌরভ পাই। আমার হিয়ার মাঝে, ও তার নূপুর বাজে, ঐ রুণু ঝানু বাজে, তোরা শোন গো সবাই।” এই সুবে সকলে অশ্রুপাত করি৩ে লাগিলেন ; পাউণ্ড শিলিং পেন্স গণনায় যাপিত-জীবন মহারাজকে সকলে কঠোর প্রাণ বলিয়া জানিত, তিনিও বালকের ন্যায় কঁাদিয়া আকুল। দীনবন্ধুবাবু আমাদের সাত খুন মাপ করিলেন, আমাকে আশীৰ্বাদ করিলেন । ভট্টাচার্য্য মহাশয়রা ত দুই হাতে দুই পায়েন্ত্র ধূলা লইয়া, মহা আনন্দে মহা আশীর্ব্বাদ করিলেন । বলিলেন “যেমনটা শ্রোতা ছেলাম, তেমনটাই স্থাখলাম।” সে রাত্রিতে আমাদের কিন্তু অসম্পূর্ণতা ছিল । ললিত-লীলাবতীর মিলনের পরিচায়ক তেমন একটি ভাল গান বাধা হয় নাই । আমরা করিলাম কি, প্রাচীন খেমটা গান ভাঙ্গিয়া : আয় আয় মকর গঙ্গাজল । লীলাবতীর বিয়ে হবে, সইতে যাব জল ।