পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরলোকগত হইয়াছেন । অনুমান করি, প্রধানত ইহার ও ইহার বয়স্তাদিগের যত্নে ও জমিদারবাবুদের সাহায্যে ঐ ইংরাজী বিদ্যালয়টি স্বাপিত হয়। আমার মনে আছে যে, সেই স্কুলে একজন ইংরাজ হেডমাস্টার লওয়া হইয়াছিল। সেটা গ্রামবাসীদের পক্ষে এক নূতন ব্যাপার। সাহেবের সঙ্গে এক কুকুর স্কুলে আসিত, সে সাহেবের টেবিলের তলায় শুইয়া থাকিত । আমরা তাহাকে দেখিয়া বড় ভয় পাইতাম । সাহেব জমিদারবাবুদের এক বাগান-বাড়িতে থাকিতেন। আমরা তঁহার পালিত মুরগী ও অন্যান্য পাখি দেখিবার জন্য গিয়া সেই বাগানে উকি ঝুকি মারিতাম। সাহেবকে রাস্তায় দেখিলে সে পথ হহঁতে অন্তধান করিতাম । ইহাতেই প্রমাণ, আমাদের গ্রামে নূতন সভ্যতার আলোক আমার বাল্যদশাতেই প্রবেশ করিয়াছিল। কেবল তাহা নহে, হরিদাস দত্ত প্রভৃতি কয়েকজন যুবকের উৎসাহে ‘মজিলপুর পত্রিক’ নামে একখানি পত্রিকা বাতির হইয়াছিল, এবং কিছুদিন চলিয়াছিল । তদ্ভিন্ন ব্রজনাথ দত্ত নামে আমাদের গ্রামে একজন মধ্যাবস্থা বিষয়ী লোক ছিলেন । জ্ঞানচর্চাতে তাহার বিশেষ উৎসাহ ছিল । তিনি ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ও জ্ঞানী মানুষদিগকে লইয়া সর্বদা জ্ঞানালোচনা করিতে ভালোবাসিতেন। শুনিয়াছি, তিনি ব্রাহ্মসমাজের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা লইতেন । হঁহার জ্যেষ্ঠপুত্র শিবকৃষ্ণ দত্ত মজিলপুর পত্রিকার সঠিত সংযুক্ত ছিলেন এবং গ্রামের উন্নতি বিষয়ে বড়ই উৎসাহী ছিলেন । শুনিয়াছি, তিনিই গ্রামে ব্রাহ্মধর্মকে প্রবিষ্ট করেন এবং আমার ভক্তিভাজন স্বগ্রামবাসী গুরুস্থানীয় উমেশচন্দ্র দত্ত প্রভৃতিকে ব্রাহ্মধর্মে অনুরাগী করেন। এই শিবকৃষ্ণ দত্ত ইহার কিছু দিন পরে ‘লুক্রিসিয়ার উপাখ্যান” বাংলা পদ্যে অনুবাদ করেন, এবং বাংলা কাব্য বিষয়ে আমাদের পথপ্রদৰ্শক হন । পরে ইনি উন্মাদরোগগ্রস্ত হইয়াছিলেন । সেই অবস্থাতেই বহুদিন পরে গীতাসু হন । ইহার উন্মাদরোগ সম্বন্ধে একটি স্মরণীয় কথা আছে। ইহাৱপিতা ব্রজনাথ দত্ত জ্ঞানানুরাগী ও গুণীগণের উৎসাহদাতা মানুষ ছিলেন বটে, কিন্তু আতিশয় সিদ্ধি খাইতেন। লোকে যেমন ঘরের দেওয়ালে গোবরের ঘুটে দিয়া রাখে, তেমনি তিনি তাহার বৈঠক ঘরের দেওয়ালে ছোট ছোট ঘুটের মতো সিদ্ধি দিয়া? ব্রাখিতেন, মধ্যে মধ্যে তাহ লইয়া নিজে খাইতেন এবং বন্ধু দিগকে খাইতে দিতেন । আশ্চর্য এই, দেখা গেল, ইহার কয়েকটি সন্তান পাগল হইয়া গেল। ইহার অতিরিক্ত সিদ্ধি পান ও ভোজন তাহার কারণ হইতে পারে । যাহা হউক, আমার শৈশবে ও আমার গ্রাম ত্যাগ করিবার সময়ে মজিলপুর শিক্ষাদি বিষয়ে চব্বিশ পরগণার দক্ষিণ প্রদেশে একটি অগ্রগণ্য গ্রাম হইয়া দাড়াইয়াছিল। এই গ্রামে ব্রাহ্মধর্মের ও বালিকাবিদ্যালয় স্থাপনের আন্দোলন চতুর্থ পরিচ্ছেদে বর্ণনা করা যাইবে । *আচ্য" কথার মানে। এই সময়ের আবু কয়েকটি বিষয় স্মরণ আছে। মাতাঠাকুরাণীর RR