পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় বিবাহের পরিণাম । এই বিবাহের পরেই আমার মনে দারুণ অনুতাপ উপস্থিত হইল। একটি নিরপরাধ স্ত্রীলোককে অন্যায়রপে গুরুতর সাজা দেওয়া হইল, এবং আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই অন্যায় কার্যের প্রধান পুরুষ হইলাম, ইহা ভাবিয়া লজ্জা ও দুঃখে অভিভূত হইয়া পড়িলাম। পিতার আদেশে বিবাহ করিতে যাইবার পূর্বে আমি এই ভাবিয়া মনকে প্রস্তুত করিয়াছিলাম যে, রামচন্দ্র পিতৃ-আজ্ঞা পালনার্থ চতুর্দশ বর্ষ বনবাস করিয়া কষ্ট পাইয়াছিলেন, আমি না হয়। পিতৃ-আজ্ঞা পালন করিয়া চিরকাল কষ্ট পাইব। কিন্তু এই অনুতাপের মুহুর্তে সে চিন্তা আর আমাকে বল দিতে পারিল না । আমি মনে করি৩ে লাগিলাম, মানুষ আপনার কাজের জন্য আপনিই দায়ী, হাজার গুরুর আদেশ হইলেও পাপের অংশ কেহ লয় না ! আত্মনিন্দাতে আমার মন অধীর হইয়া উঠিল। সে তীব্র আত্মনিন্দার কথা মনে হইলেণ্ড এখন শরীর কম্পিত হয়। আমি আমুদে উপহাস-রসিক বন্ধুতাপ্রিয় মানুষ ছিলাম, আমার হাস্য পরিহাস কোথায় উবিয়া গেল। আমি ঘন বিষাদে নিমগ্ন হইলাম | পী ফেলিবার সময় মনে হইত যেন কোনো নিচের গর্তে বা ফেলিতে যাইতেছি । রাত্রি আসিলে মনে হইত। আর প্রভাত না হইলে ভালো হয় । এই অবস্থাতে আমি ঈশ্বরের শরণাপন্ন হইলাম। আমি ঈশ্বরে অবিশ্বাস কখনো করি নাই। আমার স্মরণ আছে, এই সময়ে আমার পিতা আমার নিকট অনেক সময় সংস্কৃত নাস্তিক দর্শনের রীতি অবলম্বনে নাস্তিকতা প্রচার করিতেন । বলিতেন, বিদ্যাসাগর মহাশয় আস্তিক নহেন, ইত্যাদি । ইহা লইয়া পিতা-মাতাতে কখনো কখনো ঝগড়া হইয়াছে দেখিয়াছি। বাবার সঙ্গে এরূপ বিচারে প্রবৃত্ত আছি দেখিলে, মা বাবার প্রতি রাগ করিয়া আসিয়া আমার হাত ধরিয়া তুলিয়া লইয়া যাইতেন । বলিতেন, “রাখ, রাখি, তোমার নাস্তিক দর্শন রাখি, ছেলের মাথা খেও না ।” কিন্তু নাস্তিকতা আমাব মনে ভালো লাগিতা না, মনে বসিত না । আমি বালককাল হইত। পাড়ার সমবয়স্ক বালকদিগের সহিত সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তা বিষয়ে আলোচনা করিতে ভালোবাসিতাম। কিন্তু ইতিপূর্বে আমি ঈশ্বরের সহিত আত্মার সম্বন্ধ বিষয়ে কখনো গুরুতর রূপে চিন্তা করি নাই। ঈশ্বর চরণে প্রার্থনার অভ্যাস ছিল না । এই মানসিক গ্লানির অবস্থাতে তাহা করিতে আরম্ভ করিলাম। এই সময়ে ভক্তিভাজন উমেশচন্দ্র দত্ত মহাশয় আমার মানসিক অবসাদের কথা লইয়া আমাকে একখানি থিওডোর পার্কারের 'টেন সারমনস এ্যাণ্ড প্রেয়াস’ পাঠাইয়া দিলেন। পার্কাবের প্রার্থনাগুলি যেন আমার চিত্তে নবজীবন আনিল । আমি প্রতিদিন রাত্রে ዓ8