১৮৯৪ সালের গ্রীষ্মের ছুটীর সময় আমি আমার পিতার মৃত্যু সংবাদ পাইয়া জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সঙ্গে বাড়ী ছুটিলাম। আমাদের যে ভূসম্পত্তি অবশিষ্ট ছিল, তাহা দেনার দায়ে আবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছিল। খুলনা লোন আফিস এবং অন্যান্য মহাজনদের সঙ্গে একটা আপোষ করিলাম; কতক ঋণ কিস্তিবন্দী হিসাবে শোধের ব্যবস্থা হইল এবং অবশিষ্ট ঋণ কিছু সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া পরিশোধ করিলাম। এইরূপে এক সপ্তাহের মধ্যেই সমস্ত কাজ মিটাইয়া আমি কলিকাতায় ফিরিয়া আসিলাম এবং গ্রীষ্মের ছুটীর যে ছয় সপ্তাহ বাকী ছিল,—সেই সময়ের জন্য সোদপুরে অ্যাসিডের কারখানাতেই প্রধান আড্ডা করিলাম,—উদ্দেশ্য স্বচক্ষে কারখানার অবস্থা দেখিব। কিন্তু প্রত্যহ আমাকে দুর্গম পথ অতিক্রম করিয়া কলিকাতা যাইতে হইত এবং ৩।৪ ঘণ্টা সদর আফিসের কাজকর্ম দেখিতে হইত। সোদপরে বিশ্রাম সময়ে আমি আমার প্রিয় গ্রন্থ Kopp’s History of Chemistry (জার্মান) পড়িতাম। ছুটী শেষ হইলে আমাকে কলিকাতায় ফিরিতে হইল। আমি বুঝিতে পারিলাম যে এরূপ ছোট আকারে একটা অ্যাসিডের কারখানা লাভজনক হইতে পারে না এবং অত্যন্ত অনিচ্ছার সঙ্গে আমাকে ঐ কারখানা ছাড়িয়া দিতে হইল। পুরাতন সিসার পাতগুলি বেচিয়া মাত্র ৩।৪ শত টাকা পাওয়া গেল। এই ব্যাপারে আমার কিছু লোকসান হইল বটে, কিন্তু যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিলাম তাহা কয়েক বৎসর পরে কাজে লাগিয়াছিল।
ইহার কিছু পরে আমাদের নূতন ব্যবসায়ের পক্ষে আর এক বিপত্তি ঘটিল। অমূল্য একজন বিউবনিক প্লেগগ্রস্ত রোগীকে চিকিৎসা করিয়াছিল। এই রোগ সংক্রামক এবং অমূল্য চিকিৎসা করিতে গিয়া নিজেও এই রোগে আক্রান্ত হইল। একদিন রবিবার অপরাহ্ণে (৪ঠা সেপ্টেম্বর, ১৮৯৮) আমি আফিসে বসিয়া ঔষধের তালিকা মিলাইতেছিলাম, এমন সময় সংবাদ পাইলাম যে, অমূল্য আর ইহলোকে নাই এবং তাহার মৃতদেহ সৎকারার্থে নিমতলা শ্মশানঘাটে লইয়া গিয়াছে। আমি তৎক্ষণাৎ কাজ ছাড়িয়া উঠিলাম এবং একখানা গাড়ী ভাড়া করিয়া নিমতলার দিকে ছুটিলাম, সেখানে কিছুক্ষণ থাকিয়া গভীর শোক কোনরূপে সংযত করিয়া আবার আফিসে ফিরিয়া আসিলাম এবং অসমাপ্ত কার্য শেষ করিলাম। অমূল্যের মৃত্যুর পর আমাকেই সমস্ত কাজের ভার লইতে হইল। এই ইতিহাস আর বেশি বলিবার প্রয়োজন নাই। এই বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে পাঁচ বৎসর পরে ব্যবসায়টি লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করা হইল এবং কার্যের প্রসারের জন্য সদর আফিস হইতে তিন মাইল দূরে সহরতলীতে ১৩ একর জমি খরিদ করিয়া কারখানা নির্মিত হইল।
ইণ্ডিয়া ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্সের প্রথম ডিরেক্টর ডাঃ ট্রাভার্স এই রাসায়নিক কারখানা নির্মাণের সময় (১৯০৪-৭) উহা দেখিতে আসিয়াছিলেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট একটি রিপোর্টে লিখিয়াছেন:—
“প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়ন বিভাগের ভূতপূর্ব ছাত্রগণই এই কারখানা নির্মাণ ও পরিচালনা করিতেছেন। সালফিউরিক অ্যাসিড প্রস্তুতের যন্ত্র এবং অন্যান্য ঔষধ প্রস্তুতের যন্ত্রের নির্মাণ ও পরিকল্পনার মূলে প্রভূত গবেষণার পরিচয় আছে এবং উহার দ্বারা এদেশের সবিশেষ উপকার হইবে। যাঁহারা এই বিরাট কার্য করিতেছেন, তাঁহাদের পক্ষে ইহা গৌরবের কথা।”
মিঃ (পরে স্যার জন) কামিং বলিয়াছেন—
“বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যাণ্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড বাংলার একটি শক্তিশালী নব্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ডাঃ প্রফুল্লচন্দ্র রায় ডি, এস-সি, এফ, সি, এস, ১৫ বৎসর