সহকারী অধ্যাপক বলিলেই ঠিক হয়। আমার কোন খ্যাতিও নাই। অপর পক্ষে বার্থেলো একজন শীর্ষস্থানীয় রাসায়নিক এবং রসায়ন শাস্ত্রের বিখ্যাত ইতিহাসকার। অথচ তিনি আমাকে Savant বা মনীষী বলিয়া উল্লেখ করিতেছেন। আমার মনে এই ধারণা হইল যে কোন উচ্চতর সৃষ্টি কার্যের জন্য আমার জীবন বিধাতা কর্তৃক নির্দিষ্ট হইয়াছে।[১] আমার কার্যের বিপুলতার কথা ভাবিয়া আমি বিচলিত হইলাম না। রসায়ন বিষয়ে হস্তলিখিত পুঁথির সন্ধানে আমি প্রবৃত্ত হইলাম। Aufrecht’s Catalogus catalogorum, ভাণ্ডারকর, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এবং বার্ণেলের সংস্কৃত পুঁথির বিবরণ পাঠ করিলাম। ভারতবর্ষের বড় বড় লাইব্রেরি সমূহ এবং লণ্ডনস্থ ইণ্ডিয়া আফিসের লাইব্রেরির কর্মকর্তাদের নিকটও পুঁথির খোঁজ করিলাম। পণ্ডিত নবকান্ত কবিভূষণ প্রত্যহ ৪।৫ ঘণ্টা করিয়া এই কার্যে আমাকে সাহায্য করিতেন। তাঁহাকে আমি কাশীতে সংস্কৃত পুঁথির সন্ধানে পাঠাইলাম। ভারতবর্ষে সংস্কৃত পুঁথি সংগ্রহে যাঁহাদের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁহারাই জানেন উই এবং অন্যান্য কীট উহার উপর কি অত্যাচার করে। বাঙ্গলার আর্দ্র আবহাওয়ায় পুঁথি বেশি দিন টিকে না। এক একখানি তন্ত্রের ৪। ৫ খানি করিয়া পুঁথি সংগ্রহ করিতে হইয়াছিল। কেন না ভূমিকা অথবা উপসংহার পোকায় কাটিয়াছিল। ইহা ছাড়া বিভিন্ন পুঁথির মধ্যে পাঠের অনৈক্য আছে। পাঠককে ব্যাপারটা বুঝাইবার জন্য Bibliotheca Indica তে “রসার্ণব” তন্ত্রের উল্লেখ করা যাইতে পারে।[২] হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস পুস্তকের প্রথম ভাগের ভূমিকা হইতে উদ্ধৃত নিম্নলিখিত কয়েক ছত্র গ্রন্থ প্রণয়নে আমার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করিবে—
“স্যর্ উইলিয়ম জোন্সের সময় হইতে সংস্কৃত সাহিত্যের প্রত্যেক বিভাগেই বহু ইউরোপীয় ও ভারতীয় সুধী গবেষণা করিয়াছেন। তাঁহাদের পরিশ্রমের ফলে আমরা বহু তথ্যের সন্ধান পাইয়াছি এবং তাহা হইতে সাহিত্য, দর্শন, জ্যোতিষ, পাটিগণিত, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি প্রভৃতি বিষয়ে হিন্দুদের জ্ঞানের কিছু পরিচয় আমরা পাইয়াছি। চিকিৎসা শাস্ত্র বিষয়েও কিছু কিছু আলোচনা হইয়াছে। কিন্তু একটি বিষয় এপর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হইয়াছে। বস্তুতঃ এরূপ মনে করা যাইতে পারে যে, জটিলতার জন্যই এতাবৎ এই ক্ষেত্রে কেহ অগ্রসর হন নাই।”
হিন্দু রসায়নের ইতিহাস পাঠ করিলেই যে কেহ বুঝিতে পারিবেন, কার্যটি কিরূপ বিরাট এবং দুরূহ। কিন্তু স্বেচ্ছায় আমি এই দায়িত্ব ভার গ্রহণ করিয়াছিলাম। এবং কাজে যখন আনন্দ পাওয়া যায়, তখন তাহাতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় না, বরং উৎসাহ বর্দ্ধিত হয়। আমার পক্ষে বড়ই আনন্দের বিষয়, প্রথম ভাগ বাহির হইবামাত্র ভারতে ও বিদেশে সর্বত্র এই গ্রন্থ অশেষ সমাদর লাভ করিল। ভারতীয় সংবাদপত্রের ত কথাই নাই,—ইংলিশম্যান, পাইওনিয়ার, টাইমস্ অব ইণ্ডিয়া প্রভৃতিও এই গ্রন্থের প্রশংসাপূর্ণ দীর্ঘ সমালোচনা করিলেন। একখানি সংবাদপত্রে লিখিত হইয়াছিল যে এই গ্রন্থ monumental labour of love অর্থাৎ হৃদয়ের প্রীতি হইতে উৎসারিত অক্লান্ত সাধনার ফল। Knowledge, Nature এবং American Chemical Journal প্রভৃতিতেও এই
- ↑ ফ্রুডের কৃত কালইিলের জীবনচরিতে আছে যে কার্লাইলের আর্থিক অবস্থা যখন অত্যন্ত শোচনীয়, তাঁহার Sartor Resartus গ্রন্থ কোন প্রকাশকই লইতে চাহিতেছিলেন না। সেই সময়ে মহাকবি গ্যেটের একখানি পত্র পাইয়া তাঁহার মনে নূতন বল ও উৎসাহের সঞ্চার হইল।
- ↑ The Rasarnavam or the Ocean of Mercury and other Metals and Minerals—Ed. by P. C. Ray and H. C. Kaviratna, published by the Asiatic Society of Bengal, 1910.