অরেঞ্জ নদী উপনিবেশে, ভারতীয়েরা মজুর ব্যতীত অন্য কোন ভাবে প্রবেশ করিতে পারে না, সেজন্যও বিশেষ অনুমতি লইতে হয়। বক্তা বলেন কোন বিশেষ উদ্দেশ্য লইয়া যে এরূপ অবস্থার সৃষ্টি করা হইয়াছে তাহা নহে, বুঝিবার ভুলের দরুণই এরূপ হইয়াছে। ইংরাজী ভাষাভিজ্ঞ ভারতীয়দের অভাবে দুই জাতির মধ্যে এই বুঝিবার ভুল দাঁড়াইয়া গিয়াছে। এই সমস্ত অভিযোগ দূর করার জন্য তাঁহারা (ভারতীয়েরা) দুইটি নীতি অনুসারে কার্য করিতেছেন, প্রথমতঃ সকল অবস্থাতেই সত্যকে অনুসরণ করা, দ্বিতীয়তঃ প্রেমের দ্বারা ঘৃণাকে জয় করা। বক্তা শ্রোতাগণকে এই উক্তি কেবলমাত্র কথার কথা বলিয়া গণ্য না করিতে অনুরোধ করেন। এই নীতি কার্যকরী করিবার জন্য তাঁহারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘নেটাল ইণ্ডিয়ান কংগ্রেস’ নামে একটী সঙ্ঘ গঠন করিয়াছেন। এই সঙ্ঘ তাহার কার্য দ্বারা নিজের শক্তি প্রমাণ করিয়াছে এবং গভর্ণমেণ্টও ইহাকে অপরিহার্য মনে করেন। গভর্ণমেণ্ট কয়েকবার এই সঙ্ঘের সাহায্য গ্রহণ করিয়াছেন। দুঃস্থ ও অনাহারক্লিষ্টদের জন্য এই সঙ্ঘ অর্থ সংগ্রহ করিয়াছেন। বক্তা এই বলিয়া উপসংহার করেন যে, সভার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র দুই জাতির সৎবৃত্তিগুলিরই সাধারণের সম্মুখে আলোচনা করা। নিকৃষ্ট বৃত্তিও আছে, কিন্তু সৎবৃত্তির আলোচনা করাই শ্রেয়ঃ। ‘ইণ্ডিয়ান অ্যাম্বুলেন্স’ দল, এই ভাবের উপরেই গঠিত হইয়াছে। যদি তাহারা ব্রিটিশ প্রজার অধিকার দাবী করে, তবে তাহার দায়িত্বও গ্রহণ করিতে হইবে। এই অ্যাম্বুলেন্স দলে ভারতীয় শ্রমিকরা অবৈতনিক ভাবে কাজ করিয়া থাকে এবং জেনারেল বুলার তাঁহার ‘ডেস্প্যাচে’ ইহার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করিয়াছেন।
“রাজা প্যারীমোহন মুখার্জি বক্তাকে ধন্যবাদ দিবার প্রস্তাব করেন এবং মাননীয় অধ্যাপক গোখেল তাহা সমর্থন করেন। মিঃ ভূপেন্দ্রনাথ বসু এবং মাননীয় অধ্যাপক গোখেলও সভায় বক্তৃতা করেন। সভাপতিকে ধন্যবাদ দিবার পর সভাভঙ্গ হয়।” এইরূপে কলিকাতার জনসভায় গান্ধিজীর প্রথম আবির্ভাবের জন্য আমিই বস্তুত উদ্যোক্তা। উপরোক্ত বিবৃতি হইতে দেখা যাইবে যে, যে সত্যাগ্রহ ও নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ পরবর্তীকালে জগতে একটি প্রধান শক্তিরূপে গণ্য হইয়াছে, এই শতাব্দীর প্রথমেই তাহার উন্মেষ হইয়াছিল।
গান্ধিজীর সঙ্গে এই সময়ে আমার প্রায়ই কথাবার্তা হইত এবং তাহা আমার মনের উপর গভীর রেখাপাত করিয়াছে। গান্ধিজী তখন ব্যারিস্টারিতে মাসে কয়েক সহস্র মুদ্রা উপার্জন করিতেন। কিন্তু বিষয়ের উপর তাঁহার কোন লোভ ছিল না। তিনি বলিতেন— “রেলে ভ্রমণ করিবার সময় আমি সর্বদা তৃতীয় শ্রেণীর গাড়ীতে চড়ি, উদ্দেশ্য—যাহাতে আমার দেশের সাধারণ লোকদের সংস্পর্শে আসিয়া তাহাদের দঃখ দুর্দশার কথা জানিতে পারি।”
এই ত্রিশ বৎসর পরেও কথাগুলি আমার কানে বাজিতেছে। যে সত্য কেবলমাত্র বাক্যে নিবদ্ধ, তদপেক্ষা যে সত্য জীবনে পালিত হয় তাহা ঢের বেশি শক্তিশালী।