পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ
৮৭

ছিলেন। ফুটবল খেলার প্রসঙ্গে তিনি বলিয়াছিলেন, উহাতে দুই পক্ষের বাইশজন খেলোয়াড়েরই কোন শারীরিক ব্যায়ামের সুযোগ হয়। কিন্তু যে হাজার হাজার লোক খেলা দেখে তাহাদের কি?[]

 এই জাহাজযাত্রা আমার পক্ষে বড় ক্লান্তিজনক হইল। আমি উদরাময়ে ভুগিতে লাগিলাম, তৎপূর্বে প্রায় পনর দিন যাবৎ আমি ঐ রোগে আক্রান্ত হইবার আশঙ্কা করিতেছিলাম। আমার পাকস্থলী বড়ই দুর্বল এবং তাজা খাদ্যদ্রব্য না পাইলে উহা বিগড়াইয়া যায়। সাধারণতঃ, মাংস, মাছ এবং শাকসব্জী “কোল্ড ষ্টোরেজে” রাখা হইয়া থাকে বটে, কিন্তু তাহাদের গুণের কিছু হ্রাস হয় এবং বলিতে গেলে ‘বাসি’ হইয়া যায়। ঐ সব খাদ্য খাইলে আমার পরিপাক শক্তির বিকৃতি ঘটে। আমি অত্যন্ত অসুবিধা বোধ করিতে লাগিলাম, এ আশঙ্কাও হইল যে লণ্ডনে গিয়া আমার অবস্থা আরও খারাপ হইবে। কিন্তু লণ্ডনে পৌঁছিয়া ২৪ ঘণ্টা হোটেলে থাকিবার পরই আমি পেটের অসুখের কথা একেবারে ভুলিয়া গেলাম। তারপরেও কয়েকবার আমি ইংলণ্ডে গিয়াছি, কিন্তু প্রতিবারেই সমুদ্রবক্ষে জাহাজে আমার ঐরূপ শোচনীয় অবস্থা হইয়াছে। ফলে আমাকে বাধ্য হইয়া বোম্বাই হইতে মার্সেলিস পর্যন্ত ডাকজাহাজে ভ্রমণ করিতে হইয়াছে, উদ্দেশ্য জাহাজে যতদূর সম্ভব কম সময় থাকা।

 লণ্ডনে কয়েকদিন থাকিবার পর আমার মনে অস্বস্তি বোধ হইতে লাগিল। সহরের নানারূপ দৃশ্য দেখিয়া বেড়াইবার জন্য আমার মনে কোন আকর্ষণ ছিল না। বস্তুত ছাত্রজীবনের আমি এই বিশাল লণ্ডন সহরে কয়েকমাস মাত্র কাটাইয়াছি। দৈনিক কয়েকঘণ্টা করিয়া লেবরেটরিতে কাজ করিতে যাহারা অভ্যস্ত, হাতে কাজ না থাকিলে সময় কাটানো তাহাদের পক্ষে কঠিন হইয়া পড়ে। সুতরাং আমি কোন লেবরেটরিতে গবেষণা করিবার সুযোগ খুঁজিতে লাগিলাম। জগদীশচন্দ্র বসু পূর্বে ডেভি-ফ্যারাডে রিসার্চ্চ লেবরেটরিতে কাজ করিয়াছিলেন। অধ্যাপক ক্রাম ব্রাউন এবং সার জেমস্ ডেওয়ারের সাহায্যে আমিও সহজে ঐ লেবরেটরিতে কাজ করিবার সুযোগ লাভ করিলাম। আমি এখন কাজে মগ্ন হইয়া পড়িলাম। মাঝে মাঝে ইম্পিরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স এবং ইউনিভার্সিটি কলেজের লেবরেটরিগুলি দেখিয়া আসিতাম। ডেওয়ার কয়েক বৎসর ধরিয়া তাঁহার যুগান্তকারী গ্যাস সম্বন্ধীয় গবেষণায় লিপ্ত ছিলেন। ঐ সময় তিনি, আর্গন, নিওন এবং জেননকে কিরূপে বায়ু হইতে পৃথক করা যায়, তৎসম্বন্ধে পরীক্ষা করিতে ছিলেন। আমি তাঁহার এই সমস্ত পরীক্ষাকার্য দেখিবার সুযোগ লাভ করিলাম।

 ইউনিভার্সিটি কলেজ লেবরেটরিতে স্যর উইলিয়াম র‍্যামজে বায়ুর উল্লিখিত উপাদানসকল পৃথকীকরণের জন্য তাঁহার ও ডাঃ ট্রাভার্স কর্তৃক পরিকল্পিত যন্ত্রের কার্য আমাকে দেখাইলেন। এইরূপে আমি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ রাসায়নিকগণের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসিবার সুযোগ পাইলাম। ১৯০৪ সালে বড়দিনের ছুটীর সময় এডিনবার্গে কাটাইলাম এবং তথায় কয়েকজন পুরাতন বন্ধুর সাক্ষাৎ পাইলাম। ভারতীয় ছাত্রেরা কালেডোনিয়ান হোটেলে একটি সভা করিয়া আমাকে সম্বর্ধনা করিলেন। অধ্যাপক ক্রাম ব্রাউন ঐ সভার সভাপতির আসন গ্রহণ করেন।[] রয়েল সোসাইটি অব এডিনবার্গ আমাকে একটি ভোজসভায়


  1. সম্প্রতি (১৯২৬) যাঁহারা এ বিষয়ে বলিবার অধিকারী এমন কোন কোন ব্যক্তিও উক্তরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন:—যথা “আমরা খেলিবার পরিবর্তে খেলা দেখি”—এম. এন. জ্যাকসন, হেডমাষ্টার, মিল হিল।
  2. সম্প্রতি (১৯৩১ সালে) আমি জানিতে পারিয়াছি যে, ডাঃ আনসারী ঐ সভায় ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন।