পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

নবযুগের আবির্ভাব—বাংলাদেশে মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা—

ভারতবাসীদিগকে উচ্চতর শিক্ষাবিভাগ হইতে বহিষ্করণ

 জগদীশচন্দ্র বসু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ বি, এ উপাধিধারী। ১৮৮০ সালে তাঁহার পিতা তাঁহাকে বিলাতের প্রসিদ্ধ বিদ্যাপীঠ কেম্‌ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভার্থ প্রেরণ করেন। সেখানে জগদীশচন্দ্র লর্ড র‍্যালের পদতলে বসিয়া বিজ্ঞান অধ্যয়নের সংযোগ লাভ করেন। ১৮৮৫ সালে কলিকাতায় প্রত্যাবর্তন করিলে জগদীশচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থ-বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন। স্যার জন ইলিয়ট পদার্থ-বিজ্ঞানের প্রধান অধ্যাপক ছিলেন। তারপর বার বৎসরের মধ্যে অধ্যাপক জগদীশচন্দ্রের নাম জগত জানিতে পারে নাই। তাঁহার ছাত্রেরা অবশ্য তাঁহার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগগুলি দেখিয়া মুগ্ধ হইতেন। কিন্তু তিনি এই সময়ে চুপ করিয়া বসিয়া ছিলেন না। তাঁহার শক্তিশালী প্রতিভা নূতন সত্যের সন্ধানে নিযুক্ত ছিল এবং হার্জিয়ান বিদ্যুৎতরঙ্গ সম্বন্ধে তিনি যথেষ্ট মৌলিকতার পরিচয় দিয়াছিলেন। ১৮৯৫ সালে এসিয়াটিক সোসাইটিতে The Polarisation of Electric Ray by a Crystal বিষয়ে তিনি একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। মনে হয়, এই নূতন গবেষণার মূল্য তিনি তখনও ভাল করিয়া বুঝিতে পারেন নাই। এই প্রবন্ধ পুনর্মুদ্রিত করিয়া লর্ড র‍্যালে ও লর্ড কেলভিনের নিকট প্রেরিত হয়। পদার্থ-বিজ্ঞানের এই দুই বিখ্যাত আচার্য বসুর গবেষণার মূল্য বুঝিতে পারেন এবং লর্ড র‍্যালে “ইলেক্‌ট্রিসিয়ান” পত্রে উহা প্রকাশ করেন। লর্ড কেলভিনও বসুর উচ্চপ্রশংসা করিয়া মন্তব্য প্রকাশ করেন। এই সময়ে আমিও ‘মার্কিউরাস নাইট্রাইট’ সম্বন্ধে নূতন আবিষ্কার করি এবং ঐ সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ ১৮৯৫ সালে এসিয়াটিক সোসাইটিতে প্রেরিত হয়।

 পর্বেই বলিয়াছি—বসু সম্পূর্ণ অজ্ঞাতপূর্ব একটি আবিষ্কার করিয়াছিলেন এবং প্রথম পথপ্রদর্শকের ন্যায় প্রভূত খ্যাতিও লাভ করিয়াছিলেন। তিনি এই বিষয়ে একটির পর একটি নূতন নূতন প্রবন্ধ লিখিতে লাগিলেন, অধিকাংশই লণ্ডনের রয়্যাল সোসাইটির কার্যবিবরণে প্রকাশিত হইয়াছিল। তাঁহার যশ এখন সুপ্রতিষ্ঠিত হইল। বাংলা গবর্ণমেণ্ট তাঁহাকে ইউরোপে পাঠাইলেন। ১৮৯৭ সালে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশানের সভায় তিনি তাঁহার গবেষণাগারে নির্মিত ক্ষুদ্র যন্ত্রটি প্রদর্শন করিলেন। তখন বৈজ্ঞানিক জগতে অপূর্ব সাড়া পড়িয়া গেল। এই যন্ত্রদ্বারা তিনি বৈদ্যুতিক তরঙ্গের গতি ও প্রকৃতি নির্ণয় করিতেন। বসু পরে উদ্ভিদের শরীরতত্ত্ব সম্বন্ধে যে গবেষণা করেন, অথবা জড়জগৎ সম্বন্ধে যে যুগান্তরকারী সত্য আবিষ্কার করেন, তৎসম্বন্ধে বিস্তৃতভাবে বলিবার স্থান এ নহে। সে বিষয়ে কিছু বলিবার যোগ্যতাও আমার নাই। এখানে কেবল একটি বিষয়ে বলাই আমার উদ্দেশ্য, ভারতীয় বৈজ্ঞানিকের অপূর্ব আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক জগত কর্তৃক কি ভাবে স্বীকৃত হইয়াছিল এবং নব্য বাংলার মনের উপর তাহা কিরূপ প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল।

 স্বাধীন দেশে যুবকগণের বুদ্ধি জীবনের সর্ববিভাগে বিকাশের ক্ষেত্র পায়, কিন্তু পরাধীন জাতির মধ্যে উচ্চ আশা ও আকাঙ্ক্ষার পথ চারিদিক হইতেই রুদ্ধ হয়। সৈন্য-