প্রশস্ত আবাসবাটী অনেকের পক্ষে লোভনীয়। শাসনক্ষমতা পরিচালনা করিবার মোহ মানব প্রকৃতির মধ্যে এমনভাবে নিহিত যে বহু সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিককে ইহার জন্য নিজের কর্মজীবন নষ্ট করিতে দেখা গিয়াছে। তৎকালে মফঃস্বল কলেজগুলিতে গবেষণা করিবার উপযুক্ত লেবরেটরি, যন্ত্রপাতি বিশেষ কিছুই ছিল না। তাহা ছাড়া, রাজধানীর বাহিরে “বিদ্যার আবেষ্টনী” বলিতে যাহা বুঝায়, তাহা ছিল না। আমি তখন ‘হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাসের’ জন্য উপাদান ও তথ্য সংগ্রহে ব্যাপৃত ছিলাম, সুতরাং এসিয়াটিক সোসাইটির লাইব্রেরী আমার পক্ষে অপরিহার্য ছিল। কিন্তু আমার সর্ব প্রধান আপত্তি ছিল শাসনকার্যের প্রতি বিতৃষ্ণা, রাশি রাশি চিঠিপত্র দেখা, ফাইল ঘাঁটা কিংবা কমিটির সভায় যোগ দেওয়া; এই সমস্ত কাজে এত সময় ও শক্তি ব্যয় হয় যে অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য অবসর পাওয়া যায় না। এই সমস্ত কারণে আমি শিক্ষা বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ মার্টিনকে জানাইলাম যে আমি প্রেসিডেন্সি কলেজ ত্যাগ করিতে অনিচ্ছুক, এখানে বরং আমি জুনিয়র অধ্যাপক রূপেও সানন্দে কাজ করিব। আমার অনুরোধে ফল হইল। কয়েক দিন পরেই কলিকাতা গেজেটে নিম্নলিখিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হইল।
ডঃ মার্টিন মনে করেন যে এই প্রস্তাব অননুমোদিত হইলে, তাহার পরিণাম অপ্রীতিকর হইবে। তিনি ডাঃ পি, সি, রায়কে ডাকিয়া বলিয়াছিলেন যে, তাঁহাকে (ডাঃ রায়কে) প্রেসিডেন্সি কলেজ ত্যাগ করিতে হইবে। এই সংবাদে ডাঃ রায় শঙ্কিত হইলেন। ডাঃ মার্টিন জানেন যে ডাঃ রায় একজন প্রথিতযশা রাসায়নিক এবং প্রেসিডেন্সি কলেজে গবেষণায় ব্যাপ্ত আছেন। সুতরাং সমস্ত অবস্থা বিবেচনা করিয়া তিনি এই প্রস্তাব পরিত্যাগ করাই সমীচীন মনে করেন। লেঃ গবর্ণরও মনে করেন যে কয়েকজন কর্মচারীর পক্ষে কোন বাঁধা-ধরা নিয়ম প্রয়োগ করা সঙ্গত হইবে না।” গবর্ণমেণ্টের প্রস্তাব, ১২৪৪নং তারিখে ২৬-৩-১৮৯৭।
আমি পূর্বেই বলিয়াছি যে, আমাদের শ্রেষ্ঠ যুবকগণ আইন ব্যবসায়েই নিজেদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করিবার স্বপ্ন দেখিতেছিলেন। কিন্তু আইন ব্যবসায়ে লোকের ভিড় অত্যন্ত বাড়িয়া যাইতেছিল এবং তাহাতে সাফল্য লাভের আশা খুব কমই ছিল। যদিও বৈষয়িক হিসাবে শিক্ষাবিভাগে ঐশ্বর্যের স্বপ্ন দেখিবার সুযোগ ছিল না, তাহা হইলেও এখন প্রমাণিত হইল যে কোন একটি বিজ্ঞানের ঐকান্তিক সাধনার ফলে নূতন সত্যের আবিষ্কার এবং যশোলাভ করা যাইতে পারে।