পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

মৌলিক গবেষণা—গবেষণা বৃত্তি—ভারতীয় রাসায়নিক গোষ্ঠী

(Indian School of Chemistry)

 পূর্বেই বলা হইয়াছে যে আমার বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্রমশঃ ভারতের বাহিরে সমাদৃত হইতেছিল। বাংলা গবর্ণমেণ্ট কর্তৃক “গবেষণাবৃত্তি” স্থাপনের ফলে বিজ্ঞান চর্চায় কিয়ৎ পরিমাণে উৎসাহদান করা হইল। কোন ছাত্র যোগ্যতার সহিত এম, এস-সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলে, এবং কোন বিশেষ বিজ্ঞানের চর্চ্চায় অনুরাগ দেখাইলে, —অধ্যাপকের স,পারিশে তিন বৎসরের জন্য একশত টাকার মাসিক বৃত্তি লাভ করিতে পারিত। ১৯০০ সাল হইতে আমার বিভাগে একজন বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র সর্বদাই থাকিত। শিক্ষানবিশীর প্রথম অবস্থায় সে আমার গবেষণাকার্যে সহায়তা করিত, কিন্তু পরে প্রতিভার পরিচয় দিলে, সে নিজের উদ্ভাবিত পন্থায় বিশেষ কোন বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করিতে পারিত। এই শ্রেণীর ছাত্রদের মধ্যে অনেকে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখিয়া “ডক্টর” উপাধি লাভ করিয়াছেন এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তিও পাইয়াছেন। ইহারা আবার সহজেই শিক্ষাবিভাগে অথবা ইম্পিরিয়াল সার্ভিসের কোন টেকনিক্যাল বিভাগে কাজ পাইতেন। ইহা ছাড়া তাঁহাদের লিখিত গবেষণামূলক প্রবন্ধসমূহ ইংলণ্ড, জার্মানি ও আমেরিকার বৈজ্ঞানিক পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত হইত, ইহাও রাসায়নিক গবেষণায় উৎসাহ ও প্রেরণার অন্যতম হেতু ছিল।

 আমার নিকটে প্রথম গবেষণাবৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ছিলেন যতীন্দ্রনাথ সেন। তিনি ‘রায়চাঁদ প্রেমচাঁদ' বৃত্তি লাভ করেন। 'মার্কিউরাস নাইট্রাইটের' গবেষণায় তিনি আমার সহযোগিতা করেন। তিনি পরে পাসার কৃষি ইনষ্টিটিউটে প্রবেশ করেন এবং যথাসময়ে ইম্পিরিয়াল সার্ভিসে স্থান লাভ করেন।

 ১৯০৫ সালে পঞ্চানন নিয়োগী আমার নিকটে রিসার্চ স্কলার ছিলেন। তাহার কিছু, পরে আসেন আমার সহকারী অধ্যাপক, অতুলচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। অতুলচন্দ্রের শরীর খুব বলিষ্ঠ ছিল এবং তিনি তাঁহার দৈনিক কাজের পরেও কঠোর পরিশ্রম করিতে পারিতেন। তিনি অপরাহ্ণ ৪ই টার সময় আমার সঙ্গে কাজ করিতে আরম্ভ করিতেন এবং সন্ধ্যার পর পর্যন্ত তাহা করিতেন। ছটীর সময়েও তিনি প্রায়ই আমার সঙ্গে থাকিয়া কাজ করিতেন। অতুলচন্দ্র ঘোষ নামে আর একজন যুবক রিসার্চ স্কলাররূপে আমার কাজে সহযোগিতা করিয়াছিলেন। তিনি পরে লাহোরে দয়াল সিং কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, অতুলচন্দ্র অকালে পরলোকগমন করেন। অধ্যাপক শাস্তিস্বরূপ ভাটনগর “ফিজিক্যাল কেমিষ্ট্রী”তে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। তিনি আমাকে অনেকবার বলিয়াছেন যে অতুলচন্দ্র ঘোষের নিকট তিনি রসায়নশাস্ত্রে শিক্ষালাভ করেন। সতরাং “প্রশিষ্য” বলিয়া দাবী করেন।[]


  1. অধ্যাপক ভাটনগর তাঁহার অননুকরণীয় সরস ভাষার বলেন,—
    “আমি একটা গুরুতর অপরাধ করিয়াছি যে স্যর পি, সি, রায়ের ছাত্র হইতে পারি নাই। স্যর পি, সি, রায় সেজন্য নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করেন নাই। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনার্থ আমি