করিতে শিখেন এবং কাজে সমস্ত মন প্রাণ ঢালিয়া দেন। আরও ভাবিবার কথা আছে। বিষয়টি নানাদিক দিয়া দেখা যাইতে পারে। যিনি অন্যের সাহায্য না লইয়া একাকীই কাজ করেন, এবং অন্যের সঙ্গে পরামর্শ করা বা অন্যের অভিমত গ্রহণ করা প্রয়োজন মনে করেন না, তিনি খামখেয়ালী হইয়া উঠিতে পারেন, কিম্বা কোন একটি বিশেষ ধারণা তাঁহার মনে বদ্ধমূল হইয়া যাইতে পারে। যদি তিনি তাঁহার সহকর্মীদের পরামর্শ গ্রহণ করেন, তাহা হইলে অনেক ভ্রমের হাত হইতে নিস্তার পাইতে পারেন। সহকর্মীও যদি বুঝিতে পারেন যে, প্রভুর তাঁহার প্রতি বিশ্বাস আছে, তাহা হইলে কার্যে তাঁহার দায়িত্ববোধ জন্মে। কেবল মাত্র উপরওয়ালার আদেশ পালন করাই যেখানে রীতি, সেখানে এই দায়িত্ববোধ জন্মিতে পারে না। বস্তুতঃ, সেরূপ স্থলে প্রভু ও সেবকের মধ্যে সম্বন্ধ প্রাণহীন হইয়া উঠে। আমি অবশ্য সাধারণ লোকের কথাই বলিতেছি, অসাধারণ প্রতিভাশালী ব্যক্তিদের কথা বলিতেছি না। বিরাট প্রতিভা অথবা অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে সাধারণ লোকের বুদ্ধি ও মেধা বিকাশ লাভ করিতে পারে না। উপমা দিতে বলা যায়, বহু শাখা বিশিষ্ট বিরাট বটবৃক্ষের ছায়াতলে অন্য কোন গাছপালা বড় হইতে পারে না, বৈষয়িক জগতেও সেই একই নিয়ম খাটে। এবং যাহা বৈষয়িক জগতে ঘটে, মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রেও অল্পবিস্তর তাহাই ঘটে। বিরাট প্রতিভাশালী ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসিয়া কিরূপে বহু বৈজ্ঞানিকের সৃষ্টি হইয়াছে এবং ঐ সমস্ত বৈজ্ঞানিকেরা কিরূপে প্রতিভাশালী ব্যক্তিদের নিকট হইতে প্রেরণা লাভ করিয়াছেন, তৎসম্বন্ধে অনেক কথা লেখা যাইতে পারে। মৎকৃত ‘নব্যরসায়নশাস্ত্রের স্রষ্টাগণ’ (Makers of Modern Chemistry) নামক গ্রন্থ হইতে এই প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত অংশ উদ্ধৃত করা যাইতে পারে।
“গে-লসাকের বন্ধু ও সহকর্মী ছিলেন থেনার্ড। থেনার্ড (১৭৭৭—১৮৫৭) সাধারণ কৃষকের ছেলে। সতর বৎসর বয়সে তিনি চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়ন করিতে পারিতে আসেন। ছাত্র হিসাবে কোন লেবরেটরিতে প্রবেশ করিবার সঙ্গতি তাঁহার ছিল না, সতরাং ভকেলিনের নিকট কোন লেবরেটরির ভৃত্য হিসাবে থাকিবার জন্য প্রার্থনা করিলেন। “থেনার্ডস্ ব্লু” নামক পরিচিত মিশ্র পদার্থ আবিষ্কার করিয়া থেনার্ড খ্যাতিলাভ করেন। তাঁহার আর একটি আবিষ্কার ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’। আশী বৎসর বয়সে তাঁহার মৃত্যু হয়। সেই সময়ে তিনি ফ্রান্সের একজন ‘পীয়ার’ এবং পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হইয়াছিলেন। ভকেলিনের দরিদ্র ছাত্রদের মধ্যে মাইকেল ইউজেন শেভ্রেল (১৭৮৬—১৮৮৯) একজন। তিনি এক শতাব্দীরও অধিক বাঁচিয়া ছিলেন এবং এই হেতু নব্যরসায়নকারগণ এবং সেকালের জৈব রসায়ন শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতৃগণের মধ্যে তিনি যোগসূত্র স্বরূপ ছিলেন। Fatty Acids অর্থাৎ চর্বি-সম্ভূত অ্যাসিড সম্বন্ধে তাঁহার গবেষণা বিজ্ঞান জগতে সুবিদিত।
অগাষ্ট লরাঁ (১৮০৭—৫৩) একজন সাধারণ কৃষকের ছেলে। ১৮২৬ সালে তিনি খনিবিদ্যালয়ে ‘বাহিরের ছাত্র’ রূপে প্রবেশ লাভ করেন এবং ১৮৩১ খৃষ্টাব্দে Ecole Centrale des Arts et Métiers -এ সহকারীর পদ লাভ করেন। ঐ প্রতিষ্ঠানে ডুমা অধ্যাপক ছিলেন এবং তাঁহারই লেবরেটরিতে লরাঁ তাঁহার প্রথম গবেষণা করেন; ১৮৩৮ সালে লরাঁ বোর্ডোতে বিজ্ঞানের অধ্যাপক হন, ১৮৪৬ সালে তিনি পারিতে ফিরিয়া আসেন এবং টাকশালের ধাতু-পরীক্ষক বা অ্যাসেয়র হন। কিন্তু তাঁহার আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং কাজ করিবার সুযোগ খুব সামান্য ছিল এবং সর্বদাই তিনি অর্থকষ্ট ভোগ করিতেন। ১৮৫৩ সালে তিনি যক্ষারোগে প্রাণত্যাগ করেন। তাঁহার জীবনীকার প্রিমো লিখিয়াছেন: