আমার রোগের বৎসরে বহু অপ্রত্যাশিত এবং গৌরবময় সাফল্যলাভ হইয়াছে। তোমরা এইভাবে ভারতীয় প্রতিভার জীবন্ত শক্তির নিদর্শন জগতের নিকট প্রদর্শন করিতে থাকিবে।
রসিকের কার্যও যে অগ্রসর হইতেছে, ইহা জানিয়া আমি সুখী হইলাম। আশা করি আমি শীঘ্রই তাহার নিকট হইতে তাহার গবেষণার ফলাফল জানিতে পারিব।
গত শুক্রবার ও শনিবার আবহাওয়া বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল। কিন্তু তারপর তিন দিন ক্রমাগত বৃষ্টি হইয়াছে। গত কল্য হইতে আকাশ আবার পরিষ্কার হইয়াছে।
আমি ভাল আছি। ধীরেন্দ্র জার্মানি হইতে আমাকে পত্র লিখিয়াছে। সে পি-এইচ, ডি উপাধির জন্য তাহার মৌলিক প্রবন্ধ দাখিল করিবার অনুমতি পাইয়া আনন্দিত হইয়াছে। কিন্তু আমি আশা করি, তুমি, হেমেন্দ্র ও রসিক কার্যতঃ প্রমাণ করিতে পারিবে যে, এদেশে থাকিয়াও অনুরূপ উচ্চাঙ্গের গবেষণা করা যাইতে পারে।
ভবদীয়
(স্বাঃ) পি, সি, রায়
জিতেন্দ্রনাথ রক্ষিত,
বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যাণ্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস্
৯১, আপার সার্কুলার রোড, কলিকাতা।
আমাকে স্বীকার করিতে হইতেছে যে, এই পত্রে কি লিখিয়াছিলাম তাহা আমার আদৌ স্মরণ ছিল না। ভারতীয় রসায়ন গোষ্ঠী ধীরে ধীরে কিভাবে গড়িয়া উঠিয়াছে, এই পত্র হইতে তাহারও যোগসূত্রের সন্ধান পাইয়াছি।
এই সময়ে আর একজন যুবক আমার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি সিটি কলেজ হইতে বি, এ পাশ করেন, রসায়নবিদ্যা তাঁহার অন্যতম পাঠ্যবিষয় ছিল। উহার প্রতি অনুরাগ বশতঃ তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নশাস্ত্রে এম, এ পড়িতে লাগিলেন। তাঁহার বিমল বুদ্ধি ছিল এবং রসায়ন শাস্ত্রে শীঘ্রই প্রবেশলাভ করিলেন। তাঁহার আর একটি যোগ্যতা ছিল যাহা আমাদের বিজ্ঞানের গ্রাজুয়েটদের মধ্যে বড় একটা দেখা যায় না। বাংলা ও ইংরাজী সাহিত্যে তাঁহার দখল ছিল এবং টেষ্ট টিউবের মত লেখনী ধারণেও তিনি সুপটু ছিলেন। এই কারণে আমার সাহিত্য চর্চায় তিনি অনেক সময়ে সহায়তা করিতে পারিয়াছিলেন। ইনি হেমেন্দ্রকুমার সেন। Tetramethylammonium hyponitrite সম্বন্ধে গবেষণায় তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংসৃষ্ট ছিলেন এবং তাঁহার যোগ্যতার বিশেষ পরিচয় দেন। পূর্বোক্ত পদার্থের বিশ্লেষণ করিবার জন্য তিনি নিজে একটি প্রণালী উদ্ভাবন করেন। সেনের আর একটি কৃতিত্বের পরিচয় এই যে, তিনি জীবিকার জন্য ছাত্র পড়াইতেন এবং পরে সিটি কলেজে আংশিকভাবে অধ্যাপকের কাজও করিতেন। তাঁহার ছাত্রজীবন গৌরবময় ছিল। এম, এ পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন এবং প্রেমচাঁদ বৃত্তিও পান। ইহার ফলে তিনি লণ্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ অব সায়েন্সে রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যয়ন সম্পূর্ণ করিবার সুযোগ প্রাপ্ত হন। ঐ কলেজেও তিনি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন এবং অধ্যাপকেরা তাঁহার উচ্চ প্রশংসা করেন। লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডক্টর’ উপাধির জন্য তিনি যে মৌলিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ দাখিল করেন, তাহা খুব উচ্চাঙ্গের। পরে উহা ‘কেমিক্যাল সোসাইটি’র জার্নালে প্রকাশিত হইয়াছিল।
হেমেন্দ্র কুমারের সহপাঠী আর একজন যুবক বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তিনি স্বল্পভাষী, গম্ভীরপ্রকৃতি ছিলেন। চলিত কথায় বলে, “স্থির জলের গভীরতা বেশী—”