চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ
ভারতীয় রসায়ন গোষ্ঠী—প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে
অবসর গ্রহণ—অধ্যাপক ওয়াটসন এবং তাঁহার
ছাত্রদের কার্যাবলী—গবেষণা বিভাগের
ছাত্র—ভারতীয় রসায়ন সমিতি
আমি যথারীতি প্রেসিডেন্সি কলেজে আমার কাজ করিতে লাগিলাম। জে, সি, ঘোষ, জে, এন, মুখুয্যে এবং মেঘনাদ সাহা এই সময় উদীয়মান বৈজ্ঞানিক। বিদেশের বৈজ্ঞানিকেরা এই সময়ে দত্ত ও ধরের আবিষ্কার সমূহের উল্লেখ করিতেছিলেন। পরবর্তীগণের মনে যে তাহা উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দান করিতেছিল, তাহা সন্দেহ নাই। ক্রমশঃই অধিক সংখ্যক কৃতবিদ্য ছাত্র এই দিকে আকৃষ্ট হইতে লাগিল এবং গবেষণার প্রতি তাহাদের আগ্রহ দেখা যাইতে লাগিল। ইহাদের মধ্যে মাণিকলাল দে, এফ, ভি, ফার্নাণ্ডেজ এবং রাজেন্দ্রলাল দে-র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁহারা কেহ কেহ স্বতন্ত্র ভাবে এবং কখনও বা যুক্তভাবে মৌলিক গবেষণাপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা করিয়াছিলেন।
১৯১৪ সালে ইউরোপীয় মহাযুদ্ধ আরম্ভ হইল। উহার প্রভাব আমাদের লেবরেটরিতে শীঘ্রই আমরা অনুভব করিলাম, কেননা বাহির হইতে রাসায়নিক দ্রব্য আমদানী বন্ধ হইয়া গেল। সৌভাগ্য ক্রমে, আমাদের প্রবীণ ডেমনস্ট্রেটর পরলোকগত চন্দ্রভূষণ ভাদুড়ী মহাশয়ের দূরদৃষ্টি বশতঃ আমাদের ভাণ্ডারে যথেষ্ট রাসায়নিক দ্রব্য মজুত ছিল। আমরা তাহারই উপর নির্ভর করিয়া কাজ চালাইতে লাগিলাম। আমাদিগকে অবশ্য বাধ্য হইয়া গবেষণা কার্যের জন্য কতকগুলি বিশেষ দ্রব্য তৈরী করিয়া লইতে হইল। ইহা আমাদের পক্ষে আশীর্বাদ স্বরূপই হইল, কেননা ইহার ফলে অনেক নূতন ছাত্র রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুত প্রণালীর রহস্য অবগত হইবার সুযোগ লাভ করিলেন।
১৯১১ সালে আর একজন উৎসাহী ও শক্তিমান যুবক আমার লেবরেটরিতে যোগদান করিলেন। ইহার নাম প্রফুল্লচন্দ্র গুহ। তিনি সেই সময়ে ঢাকা কলেজ হইতে রসায়নে স-সম্মানে বি, এস-সি, পরীক্ষায় পাশ করিয়াছিলেন। সাধারণ ব্যবস্থা অনুসারে অধ্যাপক ওয়াটসনের অধীনেই তাঁহার গবেষণা করিবার কথা। কিন্তু অধ্যাপক ওয়াটসন সেই সময় ছুটী লইয়া বিলাত গিয়াছিলেন। হতাশ হইয়া প্রফুল্ল আমার নিকট করুণ আবেদন করিয়া একখানি পত্র লিখিলেন যে, তাঁহার ছাত্রজীবন অকালে শেষ হইবার উপক্রম এবং তিনি আমার অধীনে গবেষণা করিতে চাহিলেন। আমি তাঁহাকে আমার লেবরেটরিতে সাদরে আহ্বান করিলাম এবং তিনি আমার সহকর্মীরূপে কাজ করিতে আরম্ভ করিলেন। গুহ অক্লান্ত পরিশ্রমী ছিলেন এবং রাসায়নিক গবেষণায় তাঁহার স্বাভাবিক প্রতিভা ছিল। যথাসময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেও সগৌরবে উত্তীর্ণ হইলেন। এম, এস-সি পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করিলেন এবং তিন বৎসর পরে ডক্টর উপাধি লাভ করিলেন। তিনি ‘প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ’ বৃত্তিও পাইলেন।
এই সময়ে আমার কর্মজীবনে একটি নূতন অধ্যায় আরম্ভ হইল। প্রেসিডেন্সি কলেজেই আমার কার্যজীবনের প্রধান অংশ অতিবাহিত হইয়াছিল। এখন আমাকে সেই