পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ
১২৩

প্রথম এই বিষয়টির প্রতি আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হইল এবং এখন পর্যন্ত আমার স্মৃতিপথ হইতে উহা লুপ্ত হয় নাই।

 বিলাতের প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক পত্র “নেচার” এই বিষয়টি স্বীকার করেন; উক্ত পত্রের ২৩শে মার্চ, ১৯১৬ তারিখের সংখ্যায় লিখিত হইয়াছিল—

 “কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে, বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বিবিধ বিষয়ে বক্তৃতা প্রদত্ত হইতেছে। গত ১০ই জানুয়ারী তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ‘ডীন’ যে বক্তৃতা করেন, তাহা আমাদের হস্তগত হইয়াছে। গত ২০ বৎসরে বাংলাদেশে রসায়ন সম্বন্ধে যে সব মৌলিক গবেষণা করা হইয়াছে, এই বক্তৃতায় তাহার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হইয়াছে। পরিশিষ্টে ১২৬টি গবেষণার নাম দেওয়া হইয়াছে; কেমিক্যাল সোসাইটি, জার্ণাল অব দি আমেরিকান সোসাইটি প্রভৃতিতে এই সকল মৌলিক গবেষণাপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে। এই সমস্ত প্রবন্ধের মধ্যে অনেকগুলি খুব মূল্যবান এবং নব প্রতিষ্ঠিত রসায়নবিদ্যাগোষ্ঠীর কার্যাবলীর পরিচয় এইগুলিতে পাওয়া যায়। অধ্যাপক রায়ের কার্য এবং দৃষ্টান্তের ফলেই এই ‘বিদ্যাগোষ্ঠীর’ প্রতিষ্ঠা হইয়াছে। অধ্যাপকের প্রথম প্রকাশিত পুস্তক “হিন্দু রসায়নশাস্ত্রের ইতিহাস” ১৩ বৎসর পূর্বে লেখা হইয়াছিল। উহাতে তিনি প্রমাণ করেন যে প্রাচীন হিন্দুদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভাব ছিল। হিন্দুদের ধর্ম সম্বন্ধীয় গ্রন্থ সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ‘তন্ত্র’ প্রভৃতিতে ইহার পরিচয় আছে। অধ্যাপক রায়ের মত লোক—যিনি প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্রে পণ্ডিত এবং নব্য রসায়নী বিদ্যাতেও পারদর্শী—তিনিই কেবল এইরূপ গ্রন্থ লিখিতে পারেন। এই গ্রন্থে অধ্যাপক রায় দুঃখ করেন যে, ভারতে বৈজ্ঞানিক ভাবের অবনতি ঘটিয়াছে এবং যে জাতি স্বভাবতঃই দার্শনিকতা-প্রবণ, তাহাদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান-স্পৃহার অভাব হইয়াছে। এখন অধ্যাপক রায় বলিতেছেন, ‘দশ বার বৎসরের মধ্যেই আমাদের দেশবাসীর শক্তি সম্বন্ধে আমার ধারণা যে পরিবর্তিত হইবে, এবং জাতির জীবনে নূতন অধ্যায়ের সূচনা হইবে, ইহা আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই।’ বাংলাদেশে বর্তমানে যে সব মৌলিক রাসায়নিক গবেষণা হইতেছে, তাহাতে নিশ্চয়ই বুঝা যায় যে একটা নূতন ভাব জাগ্রত হইয়াছে এবং আশা করা যায় যে এই ভাব ক্রমশঃ ভারতের অন্যান্য অংশেও বিস্তৃত হইবে এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য বিভাগ সম্বন্ধেও এই মৌলিক গবেষণা-স্পৃহার উদ্ভব হইবে।”

 পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল কেমিষ্ট্রীর অধ্যাপক এস, এস, ভাটনগরও তাঁহার একটি বক্তৃতায় ভারতে ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রীর প্রবর্তকগণের অতি উচ্চ প্রশংসা করিয়াছেন।

 প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে এখন আমার অবসর গ্রহণ করিয়া নব প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান কলেজে যোগদান করিবার সময় আসিল। সাধারণ নিয়মে আরও এক বৎসর আমি প্রেসিডেন্সি কলেজের কাজে থাকিতে পারিতাম, কেন না আমার বয়ঃক্রম তখনও ৫৫ বৎসর পূর্ণ হয় নাই।

 আমার অবসর গ্রহণের সময় ছাত্রেরা আমাকে যে সম্বর্ধনা করিয়াছিলেন, এবং আমি তাহার যে প্রত্যুত্তর দিয়াছিলাম, তাহা উল্লেখযোগ্য।

“মহাত্মন্

 “প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে আপনার অবসর গ্রহণের প্রাক্কালে আপনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধা ও প্রীতির নিদর্শন গ্রহণ করুন।

 “কলেজে আপনার যে স্থান ছিল, তাহা পূর্ণ হইবার নহে। ভবিষ্যতে আরও অনেক অধ্যাপক আসিবেন; কিন্তু আপনার সেই মধুর প্রকৃতি, সেই সরলতা, অক্লান্ত সেবার