পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতু্র্দ্দশ পরিচ্ছেদ
১২৭

পুলিনবিহারী সরকার এদেশে তাঁহার অধ্যয়ন সমাপ্ত করিয়া পারিতে যান এবং সোরবোনে অধ্যাপক উরবেনের গবেষণাগারে তিনবৎসরকাল “Rare Earths” (দুষ্প্রাপ্য মৃত্তিকা) সম্বন্ধে গবেষণা করেন। ‘কেমিক্যাল হোমলজি’ সম্বন্ধে তাঁহার নূতনতম গবেষণা তাঁহার কৃতিত্বের পরিচায়ক।

 রাজেন্দ্রলাল দে ১৯১৩—১৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে আমার শিক্ষাধীনে ‘রিসার্চ্চ স্কলার’ ছিলেন। আমার সঙ্গে একযোগে নাইট্রাইট ও হাইপো-নাইট্রাইট সম্বন্ধে কতকগুলি মৌলিক প্রবন্ধ তিনি প্রকাশ করেন। তিনি নিজে স্বাধীনভাবেও ‘ভ্যালেন্সি’ সম্বন্ধে কতকগগুলি মৌলিক প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়াছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ‘লেকচারার’।

 আর একজন কৃতী ছাত্র প্রফুল্লকুমার বসু। রসায়ন শাস্ত্রের উন্নতি ও বিকাশ সম্বন্ধে সম্প্রতি যে বার্ষিক বিবরণী বাহির হইয়াছে তাহাতে বসুর মৌলিক গবেষণার ষথেষ্ট সুখ্যাতি করা হইয়াছে।

 গোপালচন্দ্র চক্রবর্তী ১৯২২-২৪ সাল পর্যন্ত আমার নিকট রিসার্চ স্কলার ছিলেন এবং ‘সালফার কম্পাউণ্ড’ ও ‘সিনথেটিক ডাই’ সম্বন্ধে বহু মৌলিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ তিনি প্রকাশ করিয়াছেন। গোপালচন্দ্র ১৯২৮ সালে ‘ডি, এস-সি’ উপাধি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি বাঙ্গালোরে ইণ্ডিয়ান ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্সে লেকচারার।

 যোগেন্দ্র চন্দ্র বর্দ্ধন অধ্যাপক প্রফুল্ল চন্দ্র মিত্রের শিক্ষাধীনে জৈব রসায়ন সম্বন্ধে অক্লান্তকর্ম্মী ছাত্র ছিলেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ‘ডক্টর’ উপাধি লাভ করিবার পর তাঁহাকে “পালিত বৈদেশিক বৃত্তি” দেওয়া হয়। ইম্পিরিয়াল কলেজ অব সায়েন্সে অধ্যাপক থর্পের নিকট তিনি তিন বৎসরকাল গবেষণা করেন এবং লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডক্টর’ উপাধি লাভ করেন। তারপর তিনি হল্যাণ্ডে গিয়া অধ্যাপক রুজিকার নিকট কিছুকাল শিক্ষা করেন। ‘Balbiano’s Acid’ সম্বন্ধে তাঁহার গবেষণা অতি মূল্যবান।

 মনোমোহন সেনও অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্র মিত্রের শিক্ষাধীনে থাকিয়া একটি মৌলিক রাসায়নিক গবেষণার জন্য 'ডক্টর' উপাধি লাভ করেন।

 বীরেশচন্দ্র গুহ সায়েন্স কলেজের একজন কৃতী ছাত্র এবং আমার লেবরেটরিতে রিসার্চ স্কলার ছিলেন। তিনি টাটা বৃত্তি লাভ করিয়া ইয়োরোপ গমন করেন। লণ্ডনের ইউনিভারসিটি কলেজে অধ্যাপক ড্রামণ্ডের শিক্ষাধীনে তিনি বাইওকেমিষ্ট্রী সম্বন্ধে বিশেষভাবে অধ্যয়ন করেন। পরে কেম্ব্রিজে অধ্যাপক হকিসের নিকটও তিনি ঐ বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। লণ্ডনে পি-এইচ, ডি ও ডি, এস-সি, উপাধি লাভ করিয়া তিনি বাইওকেমিষ্ট্রী সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞদের নিকট শিক্ষালাভ করিবার জন্য বার্লিন ও ভিয়েনায় যান। তিনি ইয়োরোপে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করিয়া সম্প্রতি দেশে ফিরিয়াছেন; বাইওকেমিষ্ট্রী সম্বন্ধে তিনি কয়েকটি মৌলিক প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়াছেন।

 সুশীলকুমার মিত্র আমার গবেষণাগারে রিসার্চ স্কলার ছিলেন। তিনিও কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ মৌলিকতার পরিচয় দিয়াছেন।

 আমার সহকর্মী অধ্যাপক জে, এন, মুখার্জী এবং এইচ, কে, সেনের লেবরেটরিতে তাঁহাদের কৃতী ছাত্রদের দ্বারা কয়েকটি মূল্যবান মৌলিক গবেষণা হইয়াছে।

 এ পর্যন্ত ভারতীয় রসায়নবিদেরা সাধারণতঃ ইংলণ্ড, জার্মানি এবং আমেরিকার পত্রিকাসমূহেই তাঁহাদের মৌলিক প্রবন্ধগুলি প্রকাশ করিবার জন্য পাঠাইতেন। আমাদের এখন মনে হইল যে ভারতেই আমাদের একটি রাসায়নিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করা উচিত এবং তাহার একখানি মুখপত্রও থাকা প্রয়োজন। অধ্যাপক ভাটনগরের যে বক্তৃতা ইতিপূর্বে উদ্ধৃত করা