হইয়াছে, তাহাতেই এইরূপ প্রস্তাব প্রথম করা হয়। নিম্নে যে সমস্ত চিঠিপত্র উদ্ধৃত হইল, তাহাতে এ সম্বন্ধে আরও অনেক কথা জানা যাইবে।
‘কেমিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেণ্ট ও কর্তাগণ নবপ্রতিষ্ঠিত ভারতীয় কেমিক্যাল সোসাইটিকে আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করিতেছেন’ (টেলিগ্রাম)। ইহার উত্তরে ‘ভারতীয় রাসায়নিক সমিতির’ সভাপতি ডাঃ প্রফুল্লচন্দ্র রায় নিম্নলিখিত পত্র লিখেন:—
বিজ্ঞান কলেজ
৯২, আপার সার্কুলার রোড
কলিকাতা (ভারতবর্ষ)
২৩শে অক্টোবর, ১৯২৪
আপনার ১৭ই অক্টোবরের (১৯২৪) টেলিগ্রামের জন্য ধন্যবাদ। আপনার নিজের এবং কেমিক্যাল সোসাইটির কাউন্সিলের অভিনন্দন ও সদিচ্ছা আমরা কত মূল্যবান মনে করি, বলা নিষ্প্রয়োজন। লণ্ডন কেমিক্যাল সোসাইটিকেই আমরা আমাদের সোসাইটির জনক মনে করি। এতদিন পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নালই রাসায়নিকদের একমাত্র মুখপত্র ছিল। এই কারণে উক্ত পত্রিকাতে ক্রমবর্দ্ধমান মৌলিক গবেষণামূলক প্রবন্ধাদি স্থানাভাবে প্রকাশ করা কঠিন হইত এবং তাহার ফলে লেখকদিগকে প্রবন্ধগুলি যতদূর সম্ভব সংক্ষেপ করিবার জন্য অনুরোধ করিতে হইত। একখানি মুখপত্রসহ ভারতে স্বতন্ত্র কেমিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ইহা হইতেই বুঝিতে পারা যাইবে।
“৪০ বৎসর পূর্বে যখন আমি এডিনবার্গে ছাত্র ছিলাম, সেই সময়ে আমি স্বপ্ন দেখিতাম,—ভগবানের ইচ্ছায় এমন দিন আসিবে যেদিন বর্তমান ভারত জগতের বিজ্ঞান ভাণ্ডারে তাহার নিজস্ব বস্তু দান করিতে পারিবে। আমার সৌভাগ্যক্রমে সে স্বপ্ন সফল হইয়াছে। মৎকৃত ‘ভারতীয় রসায়নের ইতিহাস’ গ্রন্থে আমি দেখাইয়াছি, প্রাচীন ভারতে কিরূপে উৎসাহ ও আগ্রহ সহকারে এই বিজ্ঞানের অনুশীলন করা হইত। বর্তমানে আমি সানন্দে লক্ষ্য করিতেছি যে, ভারতের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপকের পদ, আমার ছাত্রেরাই অধিকার করিয়াছেন। তাঁহারা সকলেই কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নালের নিয়মিত লেখক।
“মূল সোসাইটির সঙ্গে আমাদের সোসাইটির সৌহার্দ্য রক্ষা করিবার জন্য আমি সর্বদা চেষ্টা করিব এবং তাহার উৎসাহ ও প্রেরণা মূল্যবান সম্পদ রূপে গণ্য করিব। এই পত্র লিখিবার সময় আমার মনে যে ভাবাবেগ হইতেছে তাহা আমি রোধ করিতে পারিতেছি না। স্বভাবতঃই সেই ২৩শে ফেব্রুয়ারীর (১৮৪১) কথা আমার মনে পড়িতেছে—যে দিন আদি সদস্যেরা মিলিত হইয়া লণ্ডন কেমিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে পরামর্শ ও আলোচনা করেন। আমি সানন্দচিত্তে আরও স্মরণ করিতেছি যে, লণ্ডন কেমিক্যাল সোসাইটির আদি সদস্যদের মধ্যে লর্ড প্লেফেয়ারকে (তিনি কিছুকাল এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রতিনিধি ছিলেন) জানিবার সৌভাগ্য আমার হইয়াছিল, আমার শ্রদ্ধাস্পদ অধ্যাপক ক্রাম ব্রাউন লর্ড প্লেফেয়ারের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়া দিয়াছিলেন।
আপনার সদিচ্ছার জন্য পুনর্বার বহু ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি।
ভবদীয়
(স্বাঃ) পি, সি, রায়”
(কেমিক্যাল সোসাইটির কার্য-বিবরণী হইতে গৃহীত, তারিখ ২০শে নবেম্বর, ১৯২৪।)