বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিণ্ডিকেটের কার্যনীতি পরিচালনা করিতেন। সুতরাং মিঃ শার্প স্যার আশুতোষ ও তাঁহার প্রিয় বিজ্ঞান কলেজের বিরদ্ধে দণ্ডায়মান হইলেন। ইহা উল্লেখযোগ্য যে, লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রথমে বিজ্ঞান কলেজের পক্ষপাতী ছিলেন, তারকনাথ পালিতের মহৎ দানের জন্য তাঁহাকে ‘স্যার’ উপাধিও দেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু যেরূপেই হোক মিঃ শার্প লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর প্রভাব বিস্তার করিলেন এবং লর্ড হার্ডিঞ্জের মতের পরিবর্তন হইল। সেই সময়ে ইহাও শোনা গিয়াছিল যে বিজ্ঞান কলেজের দানসর্তের একটি ধারা পড়িয়া লর্ড হার্ডিঞ্জ ভ্রুকুঞ্চিত করিয়াছিলেন। ধারাটি এই:—“ভারতবাসী ব্যতীত কেহ অধ্যাপকের পদ পাইবে না।”[১] ১৯১৫ সালের মার্চ মাসে লর্ড হার্ডিঞ্জ কলিকাতায় আসিলে, টাউন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশান সভা হইল। লর্ড হার্ডিঞ্জ কনভোকেশানে যে বক্তৃতা দেন, তাহাতে তিনি এমন ভাব প্রদর্শন করেন যেন বিজ্ঞান কলেজের জন্য যে প্রাসাদোপম গৃহ নির্মিত হইয়াছে, তাহার কথা তিনি কিছুই জানেন না। যে রকমেই হোক ভারত গবর্ণমেণ্টের মতিগতি পরিবর্তিত হইয়াছিল এবং বিজ্ঞানের জন্য গবর্ণমেণ্টের নিকট হইতে সাহায্য পাইবার কোন আশা ছিল না।
লর্ড হার্ডিঞ্জের আমলে অ্যাসেম্বলীতে গোখেল তাঁহার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বিল উপস্থিত করেন, কিন্তু শিক্ষাসচিব স্যার হারকোর্ট বাটলার অর্থাভাবের অজুহাতে উহার বিরোধিতা করেন এবং বিলটি অগ্রাহ্য হয়। এই ব্যাপারে আমাদের শাসকদের ‘উদার উদ্দেশ্য’ সম্বন্ধে স্বভাবতঃই সন্দেহ জন্মে। গোখেল তাঁহার শেষজীবনে এই বিলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়াছিলেন। তাঁহার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়াতে একরকম ভগ্ন হৃদয় লইয়াই তাঁহার মৃত্যু হয়।
ভারত গবর্ণমেণ্ট যে রাজনৈতিক প্রভাবে পড়িয়াই বিজ্ঞান কলেজে সাহায্য দান করেন নাই, তাহার প্রমাণ দক্ষিণ ভারত ও পশ্চিম ভারতে দুইটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি গবর্ণমেণ্টের অতিরিক্ত উদারতা হইতেই বুঝা যায়। ইহার কারণ নির্ণয় করিবার জন্য বেশীদূর যাইতে হইবে না। এই দুইটি প্রতিষ্ঠানই ব্রিটিশ অধ্যাপকে পূর্ণ এবং তাঁহাদের দ্বারাই উহা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হইয়া থাকে। ভারতীয়েরা ওখানে আছেন বটে, কিন্তু নিম্নতর কাজে এবং তাঁহাদের বেতন অতি সামান্য। বাঙ্গালোরের প্রতিষ্ঠানটির মূলধন প্রায় এক কোটী টাকা এবং উহার বার্ষিক আয় প্রায় ৬ লক্ষ টাকা, তন্মধ্যে গবর্ণমেণ্ট বার্ষিক দেড় লক্ষ টাকা বৃত্তি দিয়া থাকেন। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি সাফল্য লাভ করে নাই এবং যেভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হইতেছে, দেশের জনমত তাহার বিরোধী। এতদ্বারা ইহাও প্রমাণিত হয় যে বড় বড় পদগুলি ইয়োরোপীয়দের দ্বারা পূর্ণ করিলেই কোন প্রতিষ্ঠান সাফল্য লাভ করিতে পারে না।
অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা বাঙ্গালোর ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্সের “পঞ্চবার্ষিক রিভিউ কমিটির” সদস্য হিসাবে উহার কার্যাবলী পরিদর্শনের বিশেষ সুযোগ পাইয়াছিলেন। সমস্ত অবস্থা বিবেচনা করিয়া তিনি লিখিয়াছেন:—
“পরলোকগত মিঃ টাটা এবং দেওয়ান স্যার শেষাদ্রি যে উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত করিয়াছিলেন, তাহা সফল হয় নাই। তাহার অনেক কারণ আছে, কিন্তু প্রধান কারণ, শিল্পবাণিজ্য, কলকারখানার সংশ্রব হইতে দূরে বাঙ্গালোরের মত সহরে ইহার অবস্থান। এই প্রতিষ্ঠানটি বাঙ্গালোরে না হইয়া কোন শিল্পবাণিজ্যপ্রধান সহরের নিকট প্রতিষ্ঠিত হওয়া
- ↑ পাঠকদিগকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া নিষ্প্রয়োজন যে, শিক্ষাবিভাগের উচ্চস্তর হইতে ভারতবাসীরা একপ্রকার বহিষ্কৃত বলিয়াই, এইরূপে সর্ত লিপিবদ্ধ হইয়াছিল।