দানের পরিমাণ ২৪.৭৫ লক্ষ টাকা এবং গবর্ণমেণ্টের সাহায্য ৫ লক্ষ টাকা। ২২ লক্ষ টাকা মূলধনরূপে ব্যয় হয় এবং এক লক্ষ টাকা ছাত্রবৃত্তির জন্য পৃথক রাখিয়া দেওয়া হয়। এই সমস্ত বাদ দিয়া, সরকারের নিকট ৬.৭৫ লক্ষ টাকা গচ্ছিত আছে। শতকরা ৩ ১/২ টাকা হারে উহার সুদ বার্ষিক ২৫০০০৲ টাকা। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা। সুতরাং প্রাদেশিক গবর্ণমেণ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য বার্ষিক ১.২৫ লক্ষ টাকা দিয়া থাকেন। সুতরাং ইহার জন্য গবর্ণমেণ্ট ৫ লক্ষ টাকা মূলধন যোগাইয়াছেন এবং যথেষ্ট পরিমাণে বার্ষিক সাহায্যও করিতেছেন। ইহার তুলনায় কলিকাতার বিজ্ঞান কলেজের প্রতি গবর্ণমেণ্টের ব্যবহার অত্যন্ত কার্পণ্যসূচক। বোম্বাইয়ের শিক্ষিত সমাজ কিন্তু উক্ত রয়েল ইনস্টিটিউটকে ব্যর্থ মনে করেন। সম্প্রতি বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে এ সম্বন্ধে যে আলোচনা হইয়াছে, তাহাতেই ইহার পরিচয় পাওয়া যায়।
“ডাঃ ভিগাসের প্রস্তাব এবং তাহার উপর মিঃ গোখেলের সংশোধন প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনায় যে সব তথ্য প্রকাশ পায়, তাহা উপেক্ষণীয় নহে।...”
“...রয়েল ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্সের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা এত কম যে, ইনষ্টিটিউটের পরিচালকগণকে স্বেচ্ছাচারী বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। দেশবাসী এই ইনস্টিটিউটের কার্যাবলী সম্পর্কে যে নৈরাশ্যের ভাব পোষণ করে, গবর্ণমেণ্টের তাহার প্রতি লক্ষ্য নাই। যাঁহারা এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত করিয়াছিলেন, তাঁহাদের নিশ্চয়ই এরূপ অভিপ্রায় ছিল না যে, প্রতিষ্ঠানটি একটা সেকেণ্ড গ্রেড কলেজে পরিণত হইবে।”—বোম্বে ক্লনিক্ল্, ২৫শে আগষ্ট, ১৯৩০।
প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু সেকেণ্ড গ্রেড কলেজের কাজ হয়, এ কথা বলা অবশ্য ঠিক নয়। কিয়ৎ পরিমাণে পোষ্ট-গ্রাজুয়েট শিক্ষাও ইহাতে দেওয়া হইয়া থাকে। কিন্তু ইহার বিরদ্ধে যে তীব্র সমালোচনা হইয়াছে, তাহা মোটের উপর ন্যায়সঙ্গত।
একথা বলা হইতেছে না যে, ভারতীয়েরা ইয়োরোপীয়দের চেয়ে বুদ্ধি ও মেধায় শ্রেষ্ঠ। ব্যর্থতার কারণ অন্য দিকে অন্বেষণ করিতে হইবে। পরলোকগত মিঃ জি, কে, গোখেল বলিতেন—“তৃতীয় শ্রেণীর ইয়োরোপীয় এবং প্রথম শ্রেণীর ভারতীয়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হইয়া থাকে।”
গবর্ণমেণ্ট বিজ্ঞান কলেজকে কেন প্রীতির চক্ষে দেখেন না, এমন কি অপ্রসন্ন দৃষ্টিতেই দেখিয়া থাকেন, তাহার আর একটি কারণ এই যে, এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণরূপে ভারতবাসীদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইহা গবর্ণমেণ্টের কার্যনীতির সঙ্গে মিলে না। তাঁহাদের ধারণা এই যে, এদেশের জন্য যাহা কিছু ভাল তাহা সমস্তই ‘মা বাপ’-রূপী আমলাতন্ত্র গবর্ণমেণ্টের দয়াতেই হইবে।
আশুতোষকে এইরূপে নিজের চেষ্টার উপরই সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিতে হইল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফি বাবদ প্রাপ্ত টাকা হইতে যাহা কিছু সামান্য বাঁচানো যাইত, তাহা বিজ্ঞান কলেজের লেবরেটরির যন্ত্রপাতি ইত্যাদির জন্য দেওয়া হইত। পালিত এবং ঘোষ বৃত্তির বাবদ উদ্বৃত্ত অর্থ ও কিয়ৎপরিমাণে এই কার্যে ব্যয় করিতে হইয়াছিল। এই সমস্ত উপায়ে লব্ধ মোট প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা বিজ্ঞান কলেজের জন্য ব্যয় হইয়াছে।
বিজ্ঞান কলেজে সর্বপ্রকার আধুনিকতম ব্যবস্থা করিবার জন্য কয়েকটি নূতন বিভাগ খুলিবার প্রয়োজন ছিল। রাসবিহারী ঘোষের দ্বিতীয় দান এবং খয়রা রাজার দানে এই প্রয়োজন কিয়ৎপরিমাণে সিদ্ধ হইল। ঐ দুই দানের অর্থে, ব্যবহারিক পদার্থবিদ্যা, ব্যবহারিক রসায়ন বিজ্ঞান, ফিজিক্যাল কেমিষ্ট্রী এবং বেতার টেলিগ্রাফী বিদ্যার অধ্যাপকপদ প্রতিষ্ঠিত হইল। বিজ্ঞান কলেজের গৃহ নির্মাণ করিবার সময় এই সমস্ত পরিকল্পনা