পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
আত্মচরিত

ছিল না, সুতরাং আমাদের স্থানাভাব হইতেছিল। অর্থাভাবে সমস্ত বিভাগে যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম প্রভৃতিও পাওয়া যাইতেছিল না, সতরাং আশানুরূপে কাজ হইতেছিল না।

 ১৯২৬ সালে লর্ড বালফুরের সভাপতিত্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় কংগ্রেসের যে অধিবেশন হয়, তাহাতে আমি প্রতিনিধিরূপে প্রেরিত হইয়াছিলাম। প্রথম দিনের আলোচনার বিষয় ছিল—‘রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়’। আমি এই প্রসঙ্গে বলিয়াছিলাম—

 “আমি এই বিষয়ে কিছু বলিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া আসি নাই। কিন্তু আমি দেখিতেছি যে, আমাদের হাই কমিশনার (তিনি আমার ভূতপূর্ব ছাত্র) অসুস্থতার জন্য আসিতে পারেন নাই, আরও কয়েকজন সদস্য অনুপস্থিত আছেন। সেই কারণে আমি আপনাদের সম্মুখে বক্তৃতা করিতে উপস্থিত হইয়াছি। এখানে বক্তৃতা করিবার সুযোগ লাভ করা আমি সৌভাগ্য বলিয়া মনে করি।

 “১৯১২ সালে প্রথম সাম্রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় কংগ্রেসে আমি বক্তৃতা করিবার জন্য আহূত হইয়াছিলাম। সতরাং এখানে আমি নূতন নহি। আমার যতদূর মনে পড়ে, আমাদের চেয়ারম্যান মহাশয়ও সেই সময়ে কোন এক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করিয়াছিলেন।

 “আজ আমার বক্তৃতার প্রধান উদ্দেশ্য, বাংলা দেশে শিক্ষার অবস্থা কিরূপ শোচনীয় হইয়াছে, তাহাই ব্যক্ত করা। আমাদের সম্মানিত সভাপতি মহাশয় অক্সফোর্ড ও এডিনবার্গ দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। আমি আশা করি, তিনি যে সব সারগর্ভ কথা বলিয়াছেন, তাহা ভারত গবর্ণমেণ্ট ও বাংলা গবর্ণমেণ্ট বিশেষ ভাবে বিবেচনা করিয়া দেখিবেন।

 “আপনারা জানেন, ১৯১৯ সালের মণ্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের অবস্থা কি ভাবে পরিবর্তিত করিয়াছে। উহার দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়গগুলি প্রাদেশিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হইয়াছে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হইতে যখন আমরা ভারত গবর্ণমেণ্টের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁহারা আমাদিগকে বাংলা গবর্ণমেণ্টের নিকট যাইতে বলেন; অন্যদিকে বাংলা গবর্ণমেণ্ট মেষ্টনী ব্যবস্থার দোহাই দেন। সুতরাং আমরা উভয় সঙ্কটে পড়িয়াছি। গবেষণা কার্যের জন্য ব্যক্তিগত দানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাঙ্গালোর ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্স। প্রধানতঃ বোম্বাইয়ের প্রসিদ্ধ ধনী পরলোকগত মিঃ জে, এন, টাটার বিরাট দানেই উহার প্রতিষ্ঠা। বোম্বাই বহু লক্ষপতির আবাসস্থল। যদিও বাংলাদেশ বহু ধনীসন্তানের গর্ব করিতে পারে না, তবুও সে বিষয়ে আমরা একেবারে দরিদ্র নহি। আমাদের বিজ্ঞান কলেজ দুইজন মহানুভব ধনীর দানে প্রতিষ্ঠিত। প্রধানত স্যার তারকনাথ পালিত। তিনি মৃত্যুর পূর্বে এজন্য ১৫ লক্ষ টাকা দান করিয়া যান। উহা প্রায় একলক্ষ পাউণ্ডের সমান। তিনি আইনজীবী এবং এই দানের দ্বারা তিনি তাঁহার সন্তানদিগকে তাহাদের প্রাপ্য অংশ হইতে বঞ্চিত করিয়াছিলেন, কেন না বলিতে গেলে তাঁহার সর্বস্বই তিনি বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন।

 “ভারতের অন্য একজন শ্রেষ্ঠ আইনজীবী তাঁহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেন। তাঁহার নাম স্যার রাসবিহারী ঘোষ। তিনি বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য প্রায় দেড়লক্ষ পাউণ্ড দান করিয়া যান। ভারতীয়দের নিকট হইতে আমরা যতদূর সম্ভব সাহায্য পাইয়াছি। তাঁহাদের দানের পরিমাণ মোট প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।

 “কিন্তু যখনই আমরা ভারত গবর্ণমেণ্ট বা বাংলা গবর্ণমেণ্টের নিকট অগ্রসর হই, তাঁহারা অর্থাভাবের অজুহাত দেখান,—অথচ বড় বড় ইম্পিরিয়াল স্কীমের জন্য জলের মত অর্থব্যয় করিতে তাঁহাদের বাধে না। গবর্ণমেণ্টের এই কার্পণ্যের সমালোচনা বহুবার আমাকে করিতে হইয়াছে। আমাদের সঙ্গে উপন্যাসের ‘অলিভার টুইষ্টের’ মত ব্যবহার করা হয়। আমি আশা করি সভাপতি মহাশয় যে সারগর্ভ বক্তৃতা করিয়াছেন, তাহা বেতার