পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
আত্মচরিত

দরখাস্ত[] আপনি পাঠাইয়াছেন, তাহাতে এই আবেদন করা হইয়াছে যে আদমদীঘি ও নসরতপুর ষ্টেশনের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণ করা হউক। তদুত্তরে আমি জানাইতেছি যে, যথাযোগ্য তদন্তের পর আমরা এই সিদ্ধান্ত করিয়াছি যে, উক্ত স্থানে সেতু নির্মাণের কোন প্রয়োজন নাই।

(স্বাঃ) অস্পষ্ট 
এজেণ্টের পক্ষে 
 মেমো নং ১৭৭৩—জে

বগুড়া ম্যাজিষ্ট্রেটের আফিস
৩রা নভেম্বর, ১৯২১

 উমিরদীন জোদ্দার এবং অন্যান্যের অবগতির জন্য, ম্যাজিষ্ট্রেটের পক্ষ হইতে এই পত্রের নকল প্রেরিত হইল।

(স্বাঃ) অস্পষ্ট 

 ডাঃ বেণ্টলী স্বাভাবিক জলনিকাশের পথরোধ সম্পর্কে লিখিয়াছেন:—

 “সমস্ত জলনিকাশের পথেরই গতি নদীর দিকে। ঐ সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদী আবার জলরাশিকে পদ্মা ও যমুনার গর্ভে ঢালে। দেশের অবনমন ঢালুতা বা ‘গড়ান’ ৬ ইঃ হইতে ৯ ইঃ পর্যন্ত। দুর্ভাগ্যক্রমে, যে সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার এই অঞ্চলে জেলাবোর্ড ও রেলওয়ের রাস্তাগুলি তৈরী করিবার জন্য দায়ী, তাঁহারা দেশের স্বাভাবিক জলনিকাশের পথের কথা লইয়া মাথা ঘামান নাই। কাজেই, রাস্তা ও রেলওয়ে বাঁধগুলিতে যে সব কালভার্ট বা পয়োনালীর ব্যবস্থা হইয়াছে, তাহা যথেষ্ট নহে। জলপ্রবাহ অনিষ্টকর নহে, কিন্তু উহার দ্রুত নিকাশের ব্যবস্থা করিতে হইবে। বন্যা যে প্রায় বাৎসরিক ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে, তাহার কারণই এই যে, রেলওয়ে লাইন তৈরী করিবার ত্রুটীর দরুণ, বাংলার নদীগুলির স্বাভাবিক কার্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হইয়াছে। আমাদের সম্মুখে প্রধান সমস্যা এই—স্বাভাবিক জলনিকাশের পথের পুনরুদ্ধার—যাহাতে প্রত্যেক বর্ষার পর জল দ্রুতগতিতে বাহির হইয়া যাইতে পারে। বাংলার নদী ব্যবস্থাকে সার্ভে করিয়া দেখিতে হইবে, রেলওয়ে বাঁধের ফলে প্রত্যেক নদীর গর্ভ কি ভাবে এবং কতদূর পর্যন্ত বন্ধ হইয়াছে। যেখানেই প্রয়োজন, যথেষ্ট সংখ্যক নূতন ধরণের কালভার্ট বসাইতে হইবে।....... এই ব্যবস্থা অনুসারে কার্য করিলে বাংলা দেশ তাহার রাস্তা ও রেলওয়েগুলি ঠিকমত রক্ষা করিতে পারিবে, ম্যালেরিয়াকে বহুল পরিমাণে দূর করিতে পারিবে, জলসরবরাহের ব্যবস্থার উন্নতি করিতে পারিবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ বন্যার প্রকোপও নিবারণ করিতে পারিবে। রাস্তা ও রেলওয়ের দ্বারা দেশের জলপ্রবাহের স্বাভাবিক ব্যবস্থা নষ্ট করাতেই যত কিছু গণ্ডগোলের সৃষ্টি হইয়াছে।...... রেলওয়ে বাঁধ এবং জেলাবোর্ডের রাস্তাগুলিই অনেকাংশে বন্যার জন্য দায়ী।”


  1. শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসু, সান্তাহার হইতে এই দরখাস্তখানি আমার নিকট পাঠান। ইহার একটি নকল সংবাদপত্রে পাঠানো হয় এবং আনন্দবাজার পত্রিকা ইহার বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন ও এই সম্বন্ধে মন্তব্য করেন। মূল পত্রের সন্ধান পাওয়া গেল না।