হইয়াছে, তাহা স্বীকার করিতে চাহিতেছেন না। গবর্ণমেণ্ট যে সুযোগ হারাইয়াছেন, অসহযোগীরা সেই সুযোগ গ্রহণ করিয়া গ্রামবাসীদের হৃদয় জয় করিয়া লইয়াছে। বেঙ্গল রিলিফ কমিটি খুব তৎপরতা ও সহৃদয়তার সহিত কাজ করিয়াছে। ইহার কর্মীরা গ্রামে গিয়া কৃষকদের প্রাণে সাহস সঞ্চার করিয়াছে। রেলওয়ে বিভাগ ও তাহার কর্মচারিগণ ও খুব তৎপরতার সহিত সাহায্য করিয়াছেন এবং স্থানীয় সরকারী কর্মচারিগণ খুবই পরিশ্রমসহকারে গ্রামবাসীদের দুঃখ লাঘব করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, যদিও কোন কোন সরকারী কর্মচারী (সুখের বিষয়, তাঁহারা ইউরোপীয় নহেন) বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগগুলির প্রতি ঈর্ষার ভাবই প্রকাশ করিয়াছেন।
“কিন্তু বেঙ্গল রিলিফ কমিটির ব্যবস্থার তুলনায় সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যবস্থা উৎকৃষ্ট বলা যায় না। চারিটি সরকারী জিলা এবং চারিটি সরকারী বিভাগ বন্যা সাহায্যকার্যের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তথাপি গবর্ণমেণ্ট কেবলমাত্র বন্যা সাহায্য কার্যের জন্য কোন কর্মচারী নিযুক্ত করেন নাই; এ বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগের কাজের মধ্যে শৃঙ্খলা বিধান করিতে পারেন, স্বেচ্ছাসেবকদের সুপরিচালিত করিতে পারেন, এমন কোন দায়িত্বসম্পন্ন লোকও নাই। কোন কোন বিভাগ লোক পাঠান বটে, কিন্তু উহাদের কোন কাজ থাকে না। আবার, অন্য কোন কোন বিভাগের লোকও নাই, টাকাও নাই। জনরব শুনিলাম যে, ২০ হাজার টাকা মূল্যের বীজ বিতরণ করিতে, কর্মচারীদের মাহিনা ও ভাতা বাবদ গবর্ণমেণ্টের ২০ হাজার টাকা ব্যয় হইয়াছে। এটা আনুমানিক হিসাব মাত্র, পরীক্ষিত হিসাব নহে সত্য, কিন্তু আমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি, একজন কৃষিবিশেষজ্ঞ অন্য দুইজন কৃষিবিশেষজ্ঞের কাজ পরীক্ষা করিতেছিল, শেষোক্ত দুইজন বস্তুতঃ কোন কাজই করে নাই। সুতরাং পূর্বোক্ত আনুমানিক হিসাবের চেয়ে বেশী খরচ হওয়াও আশ্চর্যের বিষয় নহে।[১]
স্টেশন মাস্টারের অভিজ্ঞতা
“একজন ষ্টেশন মাষ্টারের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়, তিনি তাঁহার স্ত্রী ও নবজাত শিশুসহ একটি গ্রাম্য ষ্টেশনে ছিলেন। বন্যার জল বাড়িতে আরম্ভ করিলে তাঁহার স্ত্রী নিজেদের বাসা ত্যাগ করিয়া ষ্টেশনের টিকিট ঘরে আশ্রয় লইতে বাধ্য হন। চারটি সাপও এই ঘরে আশ্রয় লইয়াছিল। ষ্টেশন মাষ্টার বলেন, তাঁহার ঘরের জানালার বাহিরে প্লাটফরমের উপরে একটা ছোট গাছ ছিল। সেই গাছের উপরে ২০টি সাপকে তিনি আশ্রয় লইতে দেখেন। ঐ অঞ্চলে যত সাপ ছিল, বন্যার ফলে সকলেই বিবরচ্যুত হইয়া মানুষের মতই উচ্চ ভূমিতে আশ্রয় অন্বেষণ করিতে বাধ্য হইয়াছিল। জল আরও বাড়িলে ষ্টেশন মাষ্টার আরও উচু জায়গার সন্ধানে বাহির হইলেন। লাইনের অপর দিকে গুদাম ঘর। সেখানে গিয়া সস্ত্রীক তিনি আশ্রয় লইলেন। ধানের বস্তার উপর তামাকের বস্তা ফেলিয়া যতদূর সম্ভব উঁচু করিয়া তাহার উপর তাঁহারা উঠিলেন। তখন বেলা ১টা। পরদিন রাত্রি ৮টার সময় দেখা গেল জল আরও বাড়িয়াছে এবং তাঁহাদের আশ্রয় স্থান পর্যন্ত পৌছিয়াছে। তাঁহারা জীবনের আশা ত্যাগ করিলেন। রাত্রি দশটায় শিশুটির মৃত্যু হইল। তারপর জল কমিতে লাগিল। পাকা ষ্টেশনঘরে থাকিয়া স্টেশন মাষ্টারেরই যদি এই অবস্থা হয়, তবে দরিদ্র গ্রামবাসীদের কি অবস্থা হইয়াছিল, অনুমানেই বুঝা
- ↑ পত্রপ্রেরকের উক্তি অনুমানমাত্র নহে। উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা অনেকে বলিয়াছেন যে গবর্ণমেণ্ট যখন কোন সাহায্য কার্যে অর্থব্যয় করেন, তখন তাহার প্রায় অর্ধাংশই অপব্যয় হয়। (এফ, এইচ ষ্ক্রাইন, কলিকাতা রিভিউ, ১৯২৮, আগস্ট, ১৪১—৪৭ পৃ দ্রষ্টব্য।)