পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ
১৬৭

বলা বাহুল্য, উহা গরুর খাদ্য ছাড়া আর কোন প্রয়োজনে লাগিবে না। মাননীয় সদস্য মহাশয় বলেন, ‘ঐ অঞ্চলে অনাহারের কোন দৃষ্টান্ত দেখিতে পান নাই।’ তিনি ও তাঁহার দলবল যেখানে লঞ্চে ছিলেন, সেখানে হয়ত অনাহারের দৃষ্টান্ত ছিল না। যদি তিনি দুই একদিনও থাকিতেন এবং আমার মত গ্রামের ভিতরে যাইতেন, তাহা হইলে তিনি নিশ্চয়ই দেখিতে পাইতেন যে শত শত লোক অনশনে, অর্ধাশনে আছে। অনেক স্থলে আমি দেখিয়াছি যে, তিনদিনের মধ্যে একবার আহার, সৌভাগ্য বলিয়া গণ্য। আমি যে সমস্ত গ্রামে গিয়াছি এবং যে সব লোককে সাহায্য করিয়াছি, তাহাদের নামের তালিকা দিতে পারি। ঐ সব স্থান অসীম দুর্দশাগ্রস্ত।

 ....“বন্যা সাহায্যের জন্য যে অর্থ সংগৃহীত হইয়াছে, তাহা আপাততঃ জমা করিয়া রাখার পরামর্শ দেওয়া হইয়াছে দেখিয়া আমি অত্যন্ত দুঃখিত হইলাম। দুর্দশাগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্য-সাহায্য বিতরণ করিবার এই সময় এবং যে অর্থ সংগৃহীত হইয়াছে তদ্ব্যতীত আরও অর্থ এই উদ্দেশ্যে এবং বস্ত্র ও ঔষধের জন্য প্রয়োজন; গবর্ণমেণ্টকে সেই কারণে আমি পরামর্শ দিই যে, তাঁহারা বীজশস্য এবং চাষের বলদ প্রভৃতির জন্য ঋণদান কার্য চালাইতে থাকুন। বন্যায় অধিকাংশ গো-মহিষাদি ধ্বংস হইয়া গিয়াছে। সাধারণের নিকট হইতে যে অর্থ পাওয়া গিয়াছে, তাহা বর্তমানে দুর্গতদের সাহায্যের জন্য বিতরণ করা হউক।”

পাবনা, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩১
(রেভাঃ) অ্যালান, জে, গ্রেস

 মিঃ এইচ, এস, সুরাবর্দী বন্যাপীড়িত অঞ্চল পরিভ্রমণ করিয়া ‘ষ্টেটসম্যানে’ একখানি সুদীর্ঘ পত্র লেখেন (২২শে অক্টোবর, ১৯৩১)। তাহাতে তিনি বলেন যে,—“স্মরণীয় কালের মধ্যে বাংলায় এরূপ ভীষণ বন্যা আর হয় নাই।”

 “জনৈক ভারতীয় পত্রলেখক” রেভাঃ গ্রেসের উক্ত পত্রের উপর নিম্নলিখিত মন্তব্য প্রকাশ করেন (৩০শে সেপ্টম্বর, স্টেটস্‌ম্যান):—

 “গত মঙ্গলবারের ষ্টেটসম্যানে বন্যাপীড়িত অঞ্চলের অবস্থা সম্বন্ধে পাবনার রেভাঃ অ্যালান গ্রেসের যে পত্র প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা বাংলা গবর্ণমেণ্টের রাজস্ব বিভাগের সদস্য মহাশয়কে বিব্রত করিয়া তুলিবে। মিশনারী মহাশয় রেভেনিউ সদস্যের উক্তির তীব্র প্রতিবাদ করিয়াছেন, এবং দেখাইয়াছেন যে, অনাহারের কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় নাই—সরকারী ইস্তাহারের এই বর্ণনা সত্য নহে। মিঃ গ্রেসের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এই যে, কোন কোন স্থানে লোকে তিন দিনে একবার আহার করাটা সৌভাগ্যের বিষয় বলিয়া মনে করে। সরকারী ইস্তাহারের এইরূপ প্রতিবাদ যদি কোন ভারতবাসী করিতেন তবে তাহা রাজনৈতিক আন্দোলনকারীদের মিথ্যা প্রচার কার্য বলিয়া অগ্রাহ্য হইত। কিন্তু গবর্ণমেণ্ট বা অপর কেহ মিঃ গ্রেসকে সেই দলে ফেলিতে পারিবেন কি না সন্দেহ। তাঁহার সময়োচিত ও সাহসিকতাপূর্ণ উক্তি দেখাইয়া দিয়াছে যে, সরকারী ইস্তাহারে মাঝে মাঝে যে সব বিবৃতি করা হয়, তাহা একরূপ অসার। এবং আরও দুঃখের বিষয় এই যে, এই ইস্তাহার একজন বাঙালী সদস্যের তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করিয়া লিখিত। এই বাঙালী সদস্য মহাশয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অংশ দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে বিচারপতির কার্যে যাপন করিয়াছেন।......”

 আমার মতে লেখক আসল প্রশ্নটাই এড়াইয়াছেন। রেভেনিউ সদস্যের পদে ঘটনাচকে একজন বাঙালী ছিলেন। আসলে বর্তমান শাসনপ্রণালীই যে শোচনীয় অবস্থার জন্য দায়ী, একথা আমি পূর্বেই বলিয়াছি।