পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
১৭৫

ব্যবসায়ে স্থান পাইতে পারেন, এই অপ্রিয় সত্য সকলেই ভুলিয়া যান। অবশিষ্ট শতকরা ৯৭ জনের কি হইবে? তাঁহাদের যে নিতান্ত অক্ষম অবস্থায় জীবন সংগ্রামের সম্মুখীন হইতে হইবে! যদি এই বিপুল সংখ্যা হইতে বাছিয়া বাছিয়া তিন হাজার ছাত্রকে উচ্চ শিক্ষা লাভার্থ প্রেরণ করা যায়, তবে অবসর গ্রহণ বা পদত্যাগ প্রভৃতির ফলে যে সমস্ত চাকরী খালি হয় তাহার জন্য যথেষ্ট লোক পাওয়া যাইবে, নানা বিদ্যায় গবেষণা করিবার জন্য ছাত্রের অভাব হইবে না এবং ভবিষ্যৎ শাসক, ডেপুটী ম্যাজিষ্ট্রেট, মুন্সেফ এবং উচ্চশ্রেণীর কেরাণী পদের জন্যও লোক জুটিবে।

 ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটুটারী কমিশনের রিপোর্ট (সেপ্টেম্বর, ১৯২৯) [Interim Report—Review of the Growth of Education in British India] হইতে নিম্নে যে অংশ উদ্ধৃত হইল তাহাতে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হইবে।

 “অন্যান্য দেশের ন্যায় ভারতেও আইন ব্যবসায়ে দুই চারিজনের ভাগেই মাত্র পুরস্কার মিলে, আর অধিকাংশের ভাগে পড়ে শূন্য। একজন সাধারণ উকীলের পক্ষে জীবিকার্জন করাও কঠিন হইয়া পড়ে।[] চিকিৎসা ব্যবসায় ও ইঞ্জিনিয়ারিং অপেক্ষাকৃত অল্পসংখ্যক লোকই অবলম্বন করিতে পারে—ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যাশিক্ষা ব্যয়সাধ্যও বটে। যে সমস্ত লোকের বিদ্যাচর্চার প্রতি কোন আকর্ষণ নাই, তাহা অনুশীলন করিবার যোগ্যতাও নাই, তাহারা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজী শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাহার একটি প্রধান কারণ, এই যে, গবর্ণমেণ্ট সরকারী কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী একান্ত আবশ্যক বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। যে সমস্ত কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর প্রকৃতপক্ষে কোন প্রয়োজন নাই তাহাতে গবর্ণমেণ্ট যদি ডিগ্রীর দাবী না করিতেন, তাহা হইলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলির উপর চাপ বোধ হয় কম পড়িত। আমরা প্রস্তাব করি যে, কতকগুলি সরকারী কেরাণী পদের জন্য বিলাতে যেমন সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা আছে, ঐ ধরণের পরীক্ষার ব্যবস্থা হউক। কেরাণীগিরির জন্য যে সব বিষয় জানা প্রয়োজন, উক্ত পরীক্ষা তদনুরূপ হইবে এবং উহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর দরকার হইবে না। আমরা শুধু কেরাণীগিরি কাজের কথাই বলিতেছি, উচ্চশ্রেণীর সার্ভিসের কথা বলিতেছি না। কেন না এই সব উচ্চশ্রেণীর কাজে কম লোকেরই প্রয়োজন হয় এবং উহার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যার বিশেষ কিছু হ্রাসবৃদ্ধি হইবার সম্ভাবনা নাই।

 “বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সব ছাত্রের ভীড়ই বেশী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ফলে যাহাদের মানসিক বা আর্থিক কোন উন্নতি হয় না। শত শত ছাত্রের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্থ ও শক্তির অপব্যয় মাত্র। আর ইহাতে কেবল ব্যক্তিগত অর্থেরই অপব্যয় হয় না। সকল দেশেই বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের প্রত্যেক ছাত্রের জন্য তাহার প্রদত্ত ছাত্রবেতন অপেক্ষা অনেক বেশী ব্যয় হয়, কোন কোন স্থলে পাঁচ ছয়গুণ বেশী অর্থ ব্যয় হয়।[] ভারতবর্ষে


  1. আলিপুর বারে প্রায় ১৫০ জন বি. এল ও এম. এ. বি. এল উকীল আছেন। কয়েকজন কৃতী উকীলের মুখে আমি শুনিয়াছি যে ঐ সমস্ত উকীলদের মধ্যে শতকরা ১০ জনও ভালরূপে জীবিকার্জন করিতে পারে না। এই সব ‘ব্রিফহীন’ উকীলের কথা প্রবাদবাক্যের মত হইয়া পড়িয়াছে। মক্কেলের চেয়ে উকীলের সংখ্যাই বেশী। কোন কোন দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন লোকের নিকট শুনিয়াছি, বরিশালে একজন উকীলের আয় গড়ে মাসে ২৫ টাকার বেশী নহে। অবশ্য ‘ব্রিফহীন’ উকীলদের অবস্থা বিবেচনা করিয়াই এই হিসাব ধরা হইয়াছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও কলিকাতা ও ঢাকার আইন কলেজে দলে দলে ছাত্র যোগদান করিতেছে।
  2. ১৯২৭-২৮ সালে বিভিন্ন কলেজে প্রত্যেক ছাত্রের শিক্ষার জন্য নিম্নলিখিতরূপ ব্যয় হইয়াছে:— প্রেসিডেন্সি কলেজে ৭৫৫ টাকা, তন্মধ্যে সরকারী তহবিল হইতে ৩০১.৫ টাকা; ঢাকা ইণ্টারমিডিয়েট কলেজে ৪৩১.৯ টাকা, তন্মধ্যে সরকারী তহবিল হইতে ৩৪৩.৪ টাকা; হুগলী