পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
১৭৭

যেখানে একজন জানিয়র ওপটিম সাফল্য লাভ করিয়াছে, সেখানে বিশ জন র‍্যাংলার কৃতিত্ব প্রদর্শন করিয়াছে।[]

 “কিন্তু সাধারণ নিয়ম নিশ্চয়ই এই যে যাহারা বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রথম হইয়াছে, তাহারাই জীবনসংগ্রামে জয়লাভ করিয়াছে।”

 মেকলে অন্যান্য দৃষ্টান্তের মধ্যে ওয়ারেন হেষ্টিংসের নাম করিয়াছেন। কিন্তু যেরূপেই হউক, রবার্ট ক্লাইভের কথা তাঁহার একবারও মনে পড়ে নাই। রবার্ট ক্লাইভের পিতামাতা তাঁহার সম্বন্ধে হতাশ হইয়া গিয়াছিলেন, সকলেই তাঁহাকে একবাক্যে ‘গদর্ভ’ বলিতেন। “তাঁহাকে (মেকলের ভাষাতেই) জাহাজে করিয়া মাদ্রাজ পাঠাইয়া দেওয়া হইয়াছিল—উদ্দেশ্য ছিল, হয় তিনি সেখানে ঐশ্বর্য লাভ করিবেন অথবা জ্বরে ভুগিয়া মরিবেন।” পূর্বে হেষ্টিংসের কথা উল্লেখ করিয়াছি, তিনি দারিদ্র্যবশতঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকিতে পারেন নাই।

 মেকলের নিজের কথা হইতেই আমি তাঁহার মতের প্রতিবাদ আর একবার করিব। তাঁহার প্রিয় নায়ক উইলিয়ম অব অরেঞ্জ সম্বন্ধে তিনি বলিয়াছেন—“ইতিমধ্যে তিনি তৎকালীন ‘ফ্যাশন’ কেতাবী বিদ্যায় অতি সামান্য দক্ষতাই লাভ করিয়াছিলেন। সাহিত্য বিজ্ঞান কোন বিষয়েই তাঁহার উৎসাহ ছিল না। নিউটন ও লিবনিজের আবিষ্কার অথবা ড্রাইডেন এবং বোয়ালোর কবিতা-সমস্তই তাঁহার নিকট অজ্ঞাত ছিল।”

 ব্লেনহিম সমরক্ষেত্রের বীর জন চার্চিল (পরে ডিউক অব মার্লবরো) সম্বন্ধে আমরা মেকলের বইতেই[] পড়ি,—“তাঁহার শিক্ষা সম্বন্ধে এত বেশী ঔদাসীন্য প্রদর্শন করা হইয়াছিল যে তিনি তাঁহার নিজের ভাষার অতি সাধারণ শব্দ পর্যন্ত বানান করিতে পারিতেন না। কিন্তু তাঁহার তীক্ষ্ণ ও জোরাল বুদ্ধি এই কেতাবী বিদ্যার অভাব পূর্ণ করিয়াছিল।” তাঁহারই প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস প্রসিদ্ধ বংশের একজন বংশধর উইনস্টন চার্চিল বিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় বিদ্যাবুদ্ধির বিশেষ কোন পরিচয় দেন নাই। উত্তরকালে তিনি যে একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি হইবেন, তাহার কোন আভাষই পাওয়া যায় নাই। তাঁহার পিতা লর্ড র‍্যান্‌ডলফ তাঁহার সম্বন্ধে হতাশ হইয়া কেপ কলোনি গবর্ণমেণ্টের অধীনে তাঁহার জন্য একটি সামান্য কাজের জোগাড় করিবার চেষ্টায় ছিলেন। একথা সত্য যে, গ্ল্যাডস্টোনের সময় পর্যন্ত অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের ‘বিদ্যা’ পার্লামেণ্টারী গবর্ণমেণ্টের একটা বিশেষ লক্ষণ ছিল। “১৮৫৯ সালে পামারষ্টোন যখন তাঁহার গবর্ণমেণ্ট গঠন করেন, তখন তাঁহার মন্ত্রিসভায় অক্সফোর্ডের ছয়জন প্রথম শ্রেণীর গ্রাজুয়েট ছিলেন (তাঁহাদের মধ্যে তিনজন আবার ডবলফার্স্ট) এবং মন্ত্রিসভার বাহিরে তাঁহার দলে চার জন প্রথম শ্রেণীর গ্রাজুয়েট ছিলেন ১৮৫০—১৮৬০ পর্যন্ত আমি অক্সফোর্ডের ছাত্র ছিলাম। ঐ সময়ে ইংলণ্ডের শিক্ষাব্যাপার ধর্মযাজকদের মুষ্টির মধ্যেই ছিল; কিন্তু তাঁহাদের দিন শেষ হইয়া আসিয়াছিল।” (মর্লির স্মৃতিকথা—প্রথম খণ্ড, ১২ পৃঃ)। কিন্তু গ্ল্যাডস্টোনের সময়েও ইহার ব্যতিক্রম ছিল। জন ব্রাইট স্কুল কলেজের বিদ্যার ধার ধারিতেন না। জোসেফ চেম্বারলেন নিজেকে ‘ব্যবসায়ী’ বলিয়া গর্ব করিয়াছেন। তাঁর স্ক্রুর কারখানা ছিল। ডবলিউ. এইচ. স্মিথ উত্তরকালে পার্লামেণ্টে রক্ষণশীলদলের নেতা হইয়াছিলেন। “তিনি তাঁহার প্রথম যৌবনে ও মধ্যবয়সে নিজের চেষ্টায় এবং সাধু উপায়ে একটা বৃহৎ ব্যবসায় গড়িয়া তুলিয়াছিলেন। উহাতে তাঁহার প্রচুর আয় হইত।”[]


  1. Trevelyan—Life and Letters of Macaulay, Vol. II
  2. Macaulay—History of England.
  3. Oxford and Asquith—Fifty Years of Parliament.