পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
আত্মচরিত

 বার্ট ও ব্রডহার্স্ট শ্রমিক প্রতিনিধিরূপে পার্লামেণ্টে প্রভাব বিস্তার করিয়াছিলেন এবং শেষোক্ত ব্যক্তি পরে গ্ল্যাডস্টোন মন্ত্রিসভার সদস্যও হইয়াছিলেন। শ্রমিক নেতা জন বার্নসও ১৯১৪ সালে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

 স্যার হ্যারি পার্কস কূট রাজনীতিতে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। তাঁহার জীবনী হইতে আমি কিয়দংশ উদ্ধৃত করিতেছি। “তিনি অনাথ বালক রূপে মেকাওতে তাঁহার এক আত্মীয় পরিবারে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১৫ বৎসর বয়সে ব্রিটিশ রাজদূতের অফিসে চাকরী পান। ক্যাণ্টন দখলের সময় তিনি খুব নাম করেন এবং বৈদেশিক অধিকারের সময় ঐ নগরের শাসনকর্তা হন। অ্যাংলো-ফরাসী সৈন্যদলের অভিযানের সময় তিনি পিকিন সহরে চীনাদের হস্তে নির্যাতিত হন। ৩৭ বৎসর বয়সে তিনি জাপানে ব্রিটিশ মন্ত্রী রূপে বদলী হইয়াছিলেন।”[] আরও দুইটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করিতেছি।

 “লয়েড জর্জের গৌরবময় জীবনকাহিনীর সঙ্গে ডিজ্‌রেলির তুলনা করা হয়। এই দুই চরিত্রের মধ্যে অনেক বিষয়ে সাদৃশ্য আছে সন্দেহ নাই। তাঁহাদের পূর্বগামী ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রীদের মত তাঁহাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছিল না। পক্ষান্তরে নিজেদের চেষ্টায় তাঁহারা শিক্ষালাভ করেন এবং জীবনসংগ্রামে আত্মশক্তির উপরই নির্ভর করিতেন।”[] যাঁহারা সমাজের নিম্নস্তর হইতে আসিয়াছেন—কৃষক ও শ্রমিকের ছেলে—বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষা পান নাই—তাঁহাদের মধ্যেও অসাধারণ বাগ্মিতার শক্তি দেখা গিয়াছে এবং রাজনীতিক হিসাবেও তাঁহারা প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। লর্ড কার্জন তাঁহার রীড বক্তৃতায় (১৯১৩) এই বিষয়টি নিপুণভাবে আলোচনা করিয়াছেন। তাঁহার ঐ বক্তৃতাগ্রন্থের নাম Modern Parliament Eloquence.

 “আমি আশা করি ভবিষ্যতে দেশে অন্য এক শ্রেণীর বক্তৃতার উদ্ভব হইবে, যাহা অধিকতর সময়োপযোগী ও লোকপ্রিয়। জর্জিয়ান যুগের বক্তৃতা ছিল অভিজাতধর্মী। মধ্য ভিক্টোরিয়ান যুগের বক্তৃতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রাধান্য দেখা যাইত। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক যুগের উপযোগী বাগ্মিতার আবির্ভাব হইবে। আমেরিকার আব্রাহাম লিঙ্কনের মত যদি কেহ সমাজের সাধারণ লোকদের ভিতর হইতে উদ্ভূত হন এবং তাঁহার যদি অসামান্য প্রতিভা ও বাগ্মিতা থাকে, তবে তিনি ইংলণ্ডে পুনরায় চ্যাথাম বা গ্র্যাটানের গৌরবময় যুগ সৃষ্টি করিতে পারেন। জনসভা অপেক্ষা সেনেটে তাঁহার সাফল্য কম হইতে পারে, তাঁহার বক্তৃতাভঙ্গী অতীত যুগের বিখ্যাত বক্তাদের মত না হইতে পারে, কিন্তু তিনি নিজ শক্তির বলে সর্বোচ্চ স্তরে আরোহণ করিয়া সাম্রাজ্য পরিচালনা ও তাহার ভাগ্য নির্ণয় করিতে পারেন। লয়েড জর্জের মধ্যে এইরূপ শক্তির লক্ষণ দেখা যায়।... হাউস অব কমন্সে শ্রমিক সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন উচ্চশ্রেণীর বক্তা আছেন—যথা মিঃ ফিলিপ স্নোডেন এবং মিঃ র‍্যামজে ম্যাকডোনাল্ড।” কার্জনের এই বাণী ভবিষ্যৎ বাণীতে পরিণত হইয়াছে, ইহা বলা বাহুল্য।

 যে তিনটি বক্তৃতা ইংরাজী ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তৃতা এবং ইংরাজী ভাষাভাষী জাতির সম্পদরূপে গণ্য হয়, তাহার মধ্যে দুইটিই ‘বুনো’ আব্রাহাম লিঙ্কনের। ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দের ৯ই নভেম্বর, গেটিসবার্গ সমাধিভূমিতে আব্রাহাম লিঙ্কন যে বক্তৃতা করেন, তাহা বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ।


  1. J. W. Hall—Eminent Asians, p. 161.
  2. Edwards—Life of Lloyd George.