পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
১৭৯

 বিগত ইয়োরোপীয় যুদ্ধের সময়, আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত যুবকেরা অনেক সময়ে কাজের যোগ্য বলিয়া গণ্য হইত না, সহজবুদ্ধি সাধারণ ব্যবসায়ীদিগকে ডাকিয়া কাজ চালাইতে হইত।

 যুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন বিভাগের কার্য পরিচালনার জন্য আমেরিকা এডিসনের নীতি অনুসরণ করিয়া ‘কার্যক্ষম ব্যক্তিদিগকেই’ নির্বাচিত করিরাছিল। আমাদের বিশ্বাস যে তাহারা শ্রেষ্ঠ লোকদেরই বাছিয়া লইয়াছিল। মিঃ ড্যানিয়েল উইলিয়ার্ড সৈন্য ও রসদ চালান বিভাগের (ট্রান্সপোর্টেশান) কর্তা ছিলেন। ইনি এখন আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে, বালটিমোর এবং ওহিও রেলওয়ের প্রেসিডেণ্ট। তিনি রেলওয়ে শ্রমিক রূপে জীবন আরম্ভ করেন। পরে এঞ্জিনচালক হন এবং ক্রমে ক্রমে বর্তমান পদ লাভ করিয়াছেন। ব্যাঙ্কার মিঃ ভ্যান্‌ডারলিপ আমেরিকায় বৃটিশযুদ্ধ-ঋণ-কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে তিনি ট্রেজারী-সেক্রেটারীর সহকারী নিযুক্ত হন। জগতের মধ্যে ষষ্ঠ বৃহৎ ব্যাঙ্কের তিনি প্রধান কর্তা। তিনি সংবাদপত্রের রিপোর্টার রূপে প্রথম জীবনে কাজ আরম্ভ করেন। মিঃ রোজেন-ওয়াল্‌ড যদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যক্রয় বিভাগের কর্তা ছিলেন। তিনি প্রথম জীবনে সংবাদবাহক বালক ভৃত্য ছিলেন। তিনি এখন শিকাগোর একটি বড় মাল সরবরাহকারী ব্যবসায়ী ফার্মের কর্তা এবং তাঁহার আয় বার্ষিক প্রায় ১০ লক্ষ ডলার। ব্যাঙ্কার মিঃ এইচ. পি. ডেভিসন যুদ্ধের কাজে সহায়তা করিবার জন্য ব্যাঙ্কারদের একটি কমিটি গঠন করেন। তাঁহার বিশ বৎসর বয়সেই তিনি ২ লক্ষ পাউণ্ড উপার্জন করেন, সুতরাং বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সময় পান নাই। (Hankin: The Mental Limitations of the Expert-pp. 55—56.)

 লর্ড রণ্ডা এবং স্যার এরিক গেডিস্ ব্যবসায়ীরূপে গত যুদ্ধের সময় অনেক কাজ করিয়াছেন। কিন্তু শ্রমিক গবর্ণমেণ্টের মন্ত্রিসভাতেই ইহার চূড়ান্ত দেখা গিয়াছে। “গতকল্য আমরা নূতন শ্রমিক মন্ত্রিসভার সদস্যগণের একখানি ফটোগ্রাফ প্রকাশ করিয়াছি। ১৯ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র পাঁচ জন কোন সাধারণ বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করিয়াছিলেন এবং দুইজন পরীক্ষা দিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি লাভ করেন। যে যুগে ইটন ও হ্যারো স্কুল হইতে মন্ত্রিসভার সদস্য লওয়া হইত, মনে হয়, সে যুগ অতীত হইয়াছে। ইংলণ্ডের ৪ জন মন্ত্রীর মধ্যে কেবল একজন স্কুলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেন এবং বর্তমান ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্যগণের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশেরই কোন কলিকাতা সামাজিক ক্লাবের সদস্য হইবারও যোগ্যতা নাই। ইংলণ্ডে এখন আর কেবলমাত্র পুরাতন পন্থায় উচ্চ পদ লাভ হয় না। মিঃ জোসেফ চেম্বারলেন, মিঃ লয়েড জর্জ, মিঃ বোনার ল এবং মিঃ র‍্যামজে ম্যাকডোনাল্ড পুরাতন রীতির ব্যতিক্রম করিয়াছেন। বিশ্ববিদ্যালয় হইতে এখন আর উচ্চতম যোগ্যতা বিশিষ্ট লোক বাহির হইতেছে না, লোকের মনে যাহাতে এই বিশ্বাস না জন্মে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তদ্বিষয়ে অবহিত হওয়া আবশ্যক।” (ষ্টেটসম্যান, ২৯শে জুন, ১৯২৯)

 মিঃ র‍্যামজে ম্যাকডোনাল্ড তাঁহার প্রথম জীবনের কিছু বিবরণ দিয়াছেন। তিনি বলেন—“সাইক্লিষ্টদের ভ্রমণ ক্লাবে আমি প্রথমে একটা কাজ পাই। সেখানে খামের উপরে নাম ও ঠিকানা লিখিতে হইত, সপ্তাহে দশ শিলিং করিয়া বেতন পাইতাম। কিন্তু ঐ কাজ মাত্র কিছুদিনের জন্য ছিল। মাথার ঋণের বোঝা লইয়া কপর্দক শূন্য বেকার অবস্থায় লণ্ডনের রাস্তায় ঘুরিয়া বেড়ানোর অভিজ্ঞতাও আমার আছে।”

 মিঃ ম্যাকডোনাল্ডের জ্ঞানার্জনের স্পৃহা ছিল এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করিবার জন্য তিনি ব্যগ্র হইয়াছিলেন। কিন্তু দারিদ্র্যের জন্য তাঁহার মনের ইচ্ছা পূর্ণ হয় নাই।