পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
আত্মচরিত

তিনি বলেন—“বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করিতে পারি নাই বলিয়া আমি দুঃখিত নহি। বস্তুতঃ আমার বিশ্বাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অধিকাংশ লোকের পক্ষে ইষ্ট অপেক্ষা অনিষ্ট বেশী করে।”

 আরও কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে। স্যার জোসিয়া চাইল্ড্ উইলিয়ম অব অরেঞ্জের সময়ে (১৬৯১) ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সংসৃষ্ট প্রধান ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। “তিনি ঐশ্বর্য ও প্রভাব প্রতিপত্তিতে তাঁহার সময়ের বড় বড় অভিজাতদের সমকক্ষ ছিলেন।” সামান্য শিক্ষানবিশরূপে তিনি কর্মজীবন আরম্ভ করেন। সহরের একটি ব্যাঙ্কের বাড়ী তাঁহাকে ঝাড়ু দিতে হইত। “কিন্তু এই নিম্নতম অবস্থা হইতে স্বীয় যোগ্যতার বলে তিনি ঐশ্বর্য, প্রভাব-প্রতিপত্তি, যশ ও মান লাভ করেন।” (মেকলে)

 সম্প্রতি মিঃ উইল আরউইন তাঁহার সহপাঠী প্রেসিডেণ্ট হুভারের প্রথম জীবন সম্বন্ধে একটি বিবরণ লিখিয়াছেন, তিনি বলেন—“১১ বৎসর বয়সে হুভার তাঁহার প্রভুর ঘোড়ার পরিচর্যা করিতেন, গাভী দোহন করিতেন, হাপর জ্বালাইতে সাহায্য করিতেন এবং এই সব কাজ করিয়া স্কুলেও পড়িতে যাইতেন। সালেমে একটি অফিসে বালকভৃত্য রূপে কাজ করিবার সময়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা শিখিবার জন্য তাঁহার আগ্রহ হয় এবং নূতন লেল্যাণ্ড স্ট্যানফোর্ড জুনিয়র বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষালাভ করিতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজের জীবিকাও অর্জন করিতেন।”

 “দরিদ্রের কুটীর হইতে প্রেসিডেণ্টের রাজপ্রাসাদ”—আমেরিকায় ইহা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা বিশেষ।

 ইংরাজী সাহিত্যের কয়েক জন বিখ্যাত লেখকের ভাগ্যে স্কুল কলেজের শিক্ষালাভ হয় নাই। জনসন, গিবন ও কার্লাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়িয়াছিলেন বটে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার তাঁহারা নিন্দাই করিয়াছেন। ইংলণ্ডের বর্তমান সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বার্নাড শ বলেন যে, তিনি ১৫ বৎসর বয়সে কেরাণীগিরি কাজ করিতে বাধ্য হন। সুতরাং তিনি কলেজী শিক্ষা লাভ করিতে পারেন নাই। স্পেন্সার সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতে যাহা কিছু শিক্ষা লাভ করেন। যখন তিনি Social Statics নামক গ্রন্থ লিখেন তখন তিনি কোন স্কুল কলেজের শিক্ষা পান নাই। তিনি নিজে বলিয়াছেন,—“আমার পিতৃব্যের সহিত থাকার সময়, ১৩ বৎসর হইতে ১৬ বৎসর বয়স পর্যন্ত, আমার শিক্ষা ইউক্লিড, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, মেকানিক্‌স এবং নিউটনের প্রিন্সিপিয়ার প্রথম ভাগে নিবদ্ধ ছিল। এর চেয়ে বেশী শিক্ষা আমি কখনও লাভ করি নাই।” (জীবনী, ৪৩৭ পঃ)

 “অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট আমি কোন ঋণ স্বীকার করি না এবং ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ও সানন্দে আমার ছাত্রত্ব অস্বীকার করিবেন। আমি ১৪ মাস ম্যাগডালেন কলেজে ছিলাম; আমার সমস্ত জীবনের মধ্যে ঐ ১৪ মাস অলস ও কর্মহীন বলিয়া আমি মনে করি।

* * * *

 “অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, অধিকাংশ অধ্যাপক কয়েক বৎসর হইতে শিক্ষাদানের ছলনা পর্যন্ত ত্যাগ করিয়াছেন। দেখা গিয়াছে, পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান শাস্ত্র ব্যতীত আর সমস্ত বিদ্যাই পুরাতন প্রথায় অধ্যাপকের সাহায্য ব্যতিরেকেও নানা মূল্যবান পুস্তিকা পাঠেই অধিগত করা যায়।

 “ম্যাগডালেন কলেজে অথবা অক্সফোর্ড ও কেম্‌ব্রিজের অন্য কোন কলেজে আমি যদি অনুরূপ অনুসন্ধান করিতাম, তবে প্রত্যুত্তরে অধ্যাপকরা হয়ত একটু লজ্জিত হইতেন অথবা বিদ্রূপভরে ভ্রূকুঞ্চিত করিতেন।