পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
আত্মচরিত

 মিঃ অ্যানড্রু কার্নেগী তাঁহার “Empire of Business” গ্রন্থে লিখিয়াছেন—“প্রধান প্রধান ব্যবসায়ীদের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটের অভাব বিশেষভাবে চিন্তা করিবার বিষয়। আমি সর্বত্র অনুসন্ধান করিয়া দেখিয়াছি, কর্মক্ষেত্রে যাঁহারা নেতা বা পরিচালক তাঁহাদের মধ্যে গ্রাজুয়েটদের নাম পাই নাই। বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাহারা অবশ্য বিশ্বস্ত কর্মচারিরূপে নিযুক্ত আছে। ইহা আশ্চর্যের বিষয় নহে। ব্যবসায়ে যাঁহারা সাফল্যলাভ করিয়াছেন, তাঁহারা গ্রাজুয়েটদের অনেক পূর্বেই কার্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়াছেন। তাঁহারা ১৪ বৎসর হইতে ২০ বৎসর বয়সের মধ্যে কাজে ঢুকিয়াছেন, আর এই সময়টাই শিক্ষার সময়। অপরপক্ষে কলেজের যুবকেরা এই সময়ে অতীতের তুচ্ছ কাহিনী অথবা মৃত ভাষা আয়ত্ত করিবার জন্যই ব্যস্ত ছিল। এই সব বিদ্যা ব্যবসায়ক্ষেত্রে কোন কাজে লাগে না, এ যেন অন্য কোন পৃথিবীর উপযোগী বিদ্যা। যিনি ভবিষ্যতে ব্যবসায়ক্ষেত্রে নেতৃত্ব করিয়াছেন, তিনি তখন হাতেকলমে কাজ শিখিয়া ভবিষ্যৎ জীবনসংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হইয়াছেন।”[] জনৈক আমেরিকান লেখক বলিয়াছেন—“ব্যবসায় শিক্ষার বেলায়, একথা ভুলিলে চলিবে না যে ব্যবসায়ীর ভবিষ্যৎ জীবন কাজের জীবন হইবে, অধ্যয়নের জীবন হইবে না। অকেজো উপাধিলাভের প্রচেষ্টায় তাহার স্বাস্থ্য যাহাতে নষ্ট না হয় এবং বাজে বিষয় চিন্তা করিয়া সে যাহাতে বেশী ভাবপ্রবণ না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখিতে হইবে।”

আমি যদি পুনর্বার যুবক হইতাম!

যুবকদের সুযোগ

 ব্যবসায়ী, ক্রোরপতি এবং খেলোয়াড় স্যার টমাস লিপ্‌টন দারিদ্রের নিম্ন স্তর হইতে অভ্যুত্থান করিয়াছেন। “জীবনে কে সাফল্য লাভ করে?”—এ সম্বন্ধে তিনি তাঁহার নিজস্ব ভঙ্গীতে জোরাল ভাষায় নিম্নলিখিত কথাগুলি বলিয়াছেন:—

 “ষাট বৎসরেরও অধিক হইল, আমি গ্লাসগোর একটি গুদাম ঘরে শ্রমিকের কাজ করিতাম, পারিশ্রমিক ছিল সপ্তাহে অর্দ্ধ ক্রাউন ( / শিলিং)। সেই সময় আমি মনে করিতাম, আমার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য আত্মগর্ব। তার পর বহু বৎসর অতীত হইয়াছে, আমি এখন বুঝিতে পারিয়াছি মানুষের জীবনে সর্বাপেক্ষা বড় সম্পদ তাহার আত্মবিশ্বাস।

 “আমার সেই প্রথম জীবনে যখন আমার আয় দৈনিক ৬ পেন্সের কম ছিল,—আমি আমার মাতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলাম, শীঘ্রই তাঁহার জুড়ীগাড়ী হইবে। ইহা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি নয়, আমার মাতার মৃত্যুর বহু বৎসর পূর্বেই তিনি প্রায় এক ডজন জুড়ীগাড়ীর অধিকারিণী হইয়াছিলেন।


  1. পরলোকগত ভূপেন্দ্রনাথ বসু যখন বিলাতে ‘ইণ্ডিয়া কাউন্সিলের’ সদস্য ছিলেন, তখন তাঁহার জনৈক সহকর্মীকে (ইনি কোন বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংসৃষ্ট ছিলেন), একটী বাঙালী যুবককে ব্যাঙ্কের কাজে শিক্ষানবীশ লইতে অনুরোধ করেন। সহকর্মী যখন জানিতে পারিলেন যে যুবকটি গ্রাজুয়েট এবং তাহার বয়স ২২ বৎসর, তখন মাথা নাড়িয়া বলিলেন—“তরুণ বন্ধু তুমি তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অংশ অপব্যয় করিয়াছ এবং আমার আশংকা হয়, ব্যাঙ্কের কাজ শেখা তোমার পক্ষে অসম্ভব। আমরা গ্রামার স্কুলের পাশকরা ১৪ বৎসর বয়সের ছেলেদের ব্যাঙ্কে শিক্ষানবীশ লইয়া থাকি। তাহারা ঘরে ঝাড়ু দেয়, টেবিল চেয়ার পরিষ্কার করে, সংবাদবাহকের কাজ করে, সেই সঙ্গে হিসাব রাখিতে ও খাতাপত্র লিখিতে শিখে এবং এইরূপে তাহারা ক্রমে ব্যাঙ্কের কাজে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়া দারিত্বপূর্ণ পদ পায়।”