পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
১৮৫

কিছুই জানিতেন না, কিন্তু তাহাতে তিনি পশ্চাৎপদ হন নাই। এ বিষয়ে যাহা কিছু পাঠ্য পাইয়াছিলেন, সমস্তই তিনি পড়িয়াছিলেন। বহু-কোটিপতি এবং লোকহিতব্রতী অ্যানড্রু কার্নেগী টেলিগ্রাফের পিওন রূপে কাজ আরম্ভ করেন। তাঁহার জীবনেও এই একই দৃষ্টান্ত দেখা যায়। এক কথায় তিনি সম্পূর্ণ স্বীয় চেষ্টায় শিক্ষালাভ করেন। কার্নেগী আবিষ্কারক কিম্বা বৈজ্ঞানিক নহেন। কিন্তু একটা মহৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে সময়োপযোগী করিয়া কিরূপে কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করিতে হয়, সে বিষয়ে তাঁহার সমকক্ষ কেহ ছিল না। অ্যানড্রু কার্নেগী ‘বেসেমার প্রক্রিয়াকে’ গ্রহণ করিয়া আমেরিকায় তথা জগতের শিল্পে যুগান্তর আনয়ন করেন। সুতরাং দেখা যাইতেছে, ব্যবসায়ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করিতে হইলে, অথবা শিল্পপ্রবর্তক হইতে হইলে, বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞের জ্ঞান তেমন প্রয়োজনীয় নহে, সেজন্য চাই সঙ্ঘবদ্ধভাবে কার্য করিবার শক্তি, উৎসাহ ও প্রেরণা। ডাঃ হ্যার্কিন যথার্থই বলিয়াছেন:—

 “ব্যবসায়ীর নিকট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি অকেজো বলিয়াই মনে হয়। ব্যবসায়ীর মতে সহজ বুদ্ধি বা কাণ্ডজ্ঞানই আসল জিনিষ, ইহার দ্বারাই অর্থোপার্জন করা যায়। বিশেষজ্ঞের মধ্যে ইহার একান্ত অভাব।

 “জনৈক বিশেষজ্ঞ কোন ব্যবসায়ীর জ্ঞানের সুযোগ লইয়া ব্যবসায়ক্ষেত্রে অধিকতর সাফল্য লাভ করেন। ব্যবসায়ীটি এজন্য দুঃখ করিয়া বলেন,—‘আমি ভাবিয়াছিলাম, সে কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক।’

 “পরলোকগত আমেরিকান ব্যাঙ্কার মরগ্যান একবার বলিয়াছিলেন, ‘আমি ২৫০ ডলার দিয়া যে কোন বিশেষজ্ঞকে ভাড়া করিতে পারি, এবং তাহার প্রদত্ত তথ্যের দ্বারা আরও ২৫০ হাজার ডলার উপার্জন করিতে পারি। কিন্তু সে আমাকে ঐভাবে কাজে খাটাইতে পারে না।’ একজন সাধারণ বিশেষজ্ঞের ব্যবসায়ক্ষেত্রে উপযোগিতা কতটুকু, তাহা এই কয়টি কথার দ্বারাই প্রকাশ পাইতেছে।”

 আর একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত দিতেছি।

মি: বাটার কর্মজীবন

 “মোরেভিয়ার জিলিন সহরনিবাসী মিঃ টমাস বাটা দশ বৎসরে এক কোটী পাউণ্ড উপার্জন করিয়াছেন বলিয়া শোনা যায়। ইনি জগতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় পাদুকা ব্যবসায়ী। কিছুদিন পূর্বে বিমানযোগে ইনি কলিকাতায় আসিয়াছেন।

 “ব্যবসায়ক্ষেত্রে মি: বাটার সাফল্যের কাহিনী উপন্যাসের মতই চিত্তাকর্ষক। তিনি একজন গ্রাম্য মুচির ছেলে, বাল্যকালে লোকের বাড়ী জুতা বিক্রয় করিয়া বেড়াইতেন। বর্তমানে ৫৫ বৎসর বয়সে তিনি জগতের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ জুতার কারখানার অধিকারী। তাঁহার কারখানায় প্রত্যহ ১ লক্ষ ৬০ হাজার জোড়া জুতা তৈরী হয় এবং ১৭ হাজার লোক কাজ করে। (দৈনিক সংবাদপত্র, ৮ই জানুয়ারী, ১৯৩২)

 আমি বহুবার বক্তৃতাপ্রসঙ্গে বলিয়াছি যে, স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় যদি ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করিতেন, তাহা হইলে বাংলাদেশের পক্ষে দুর্ভাগ্য হইত। যদি তিনি বি, ই, ডিগ্রীধারী হইতেন, তবে তাঁহার কর্মজীবন ব্যর্থ হইত।[]


  1. “সরকারী কাজ পাইবার সম্ভাবনাই ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা শিক্ষার প্রধান আকর্ষণ। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দশজন ছাত্রের মধ্যে গড়ে ৮ জন মাত্র সরকারী কাজ পায় এবং কেবলমাত্র একজন বে-সরকারী কাজে নিযুক্ত হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মিঃ হিটন বলেন যে,