“এই সব কলেজে প্রায় ১৩ হাজার ছাত্র এবং ৩ হাজার ছাত্রী কলেজে থাকিবার সমর স্বোপার্জিত অর্থে ব্যয় নির্বাহ করে। সাধারণতঃ আণ্ডার-গ্রাজুয়েটরা আংশিক সময়ে কাজ করিয়া এক এক ‘টার্মে’ ৩০ পাউণ্ড হইতে ৭০ পাউণ্ড এবং গ্রীষ্মাবকাশে ৪০ পাউণ্ড হইতে ৫০ পাউণ্ড পর্যন্ত উপার্জন করে।”
ট্রিবিউন পত্রিকার চীনস্থিত একজন সাংবাদিকের কথাপ্রসঙ্গে ক্যারূপ নিলসেন বলিয়াছেন—“অন্য অনেক আমেরিকান সাংবাদিকের ন্যায় তিনি জীবনে নানা কাজ করিয়াছেন, তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি লইয়া সংবাদপত্রসেবী হইয়াছেন। এক সময়ে তিনি রেলওয়ে লাইনে শ্রমিকের কাজও করিয়া ছিলেন।”—The Dragon Awakes p. 77.
ইহার দ্বারা বুঝা যায় না যে, আমেরিকার প্রত্যেক কলেজের ছাত্র স্বাবলম্বী এবং পরিশ্রমী। বহু বৎসর পূর্বে, এমার্সন সহরের পুত্তলিকাবৎ অকর্মণ্য ছাত্র (ইহারা অনেকটা আমাদেরই সহরবাসী ছাত্রদের মত) এবং দৃঢ়-প্রকৃতি স্বাবলম্বী যুবকের তুলনা করিয়া বলিয়াছেন:—
“আমাদের যুবকরা যদি প্রথম চেষ্টাতেই ব্যর্থ হয়, তবে তাহারা ভগ্নহৃদয় হইয়া পড়ে। যদি কোন নবীন ব্যবসায়ী সাফল্য লাভ করিতে না পারে, লোকে বলে যে সে একেবারে ধ্বংসের মুখে গিয়াছে। যদি কোন বুদ্ধিমান ছাত্র কলেজ হইতে বাহির হইয়া এক বৎসরের মধ্যে বোস্টন বা নিউইয়র্কে কোন আফিসে কাজ না পায় তবে সে এবং তাহার বন্ধুগণ মনে করে তাহার নিরাশ হইবার ও সারাজীবন বিলাপ করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। পক্ষান্তরে, নিউ হাম্পাশায়ার বা ভারমণ্ট হইতে আগত দৃঢ় প্রকৃতি যুবক একে একে সমস্ত কাজে হস্ত দেয়, সে ফার্মে শ্রমিকের কাজ করে, ফেরী করে, স্কুলে পড়ায়, বক্তৃতা করে, সংবাদপত্র সম্পাদন করে, কংগ্রেসে যায়, নাগরিকের অধিকার ক্রয় করে। বৎসরের পর বৎসর এইরূপ বিভিন্ন কাজ করিয়াও তাহার চিত্তের স্থৈর্য নষ্ট হয় না। সে একাই, সহরবাসী এক শত অকর্মণ্য পুত্তলিকার সমকক্ষ, সে জীবনের পথে বুক ফুলাইয়া চলে, কোন উচ্চতর বৃত্তি শিক্ষা করে নাই বলিয়া লজ্জা বোধ করে না,—কেননা সে কখনও তাহার জীবনের গতি বন্ধ করে নাই, সর্বদাই সে জীবন্ত। তাহার জীবনে মাত্র একবার সুযোগ আসে না, শত শত সুযোগ তাহার সম্মুখে বর্তমান।”
মিষ্টার সি, জে, স্মিথ গত ৪০ বৎসর ধরিয়া অনেক বড় বড় কাজ করিয়াছেন। তিনি সম্প্রতি (১৯৩১) ৬৯ বৎসর বয়সে ‘ক্যানাডিয়ান ন্যাশন্যাল রেলওয়ের’ ভাইস প্রেসিডেণ্টের পদ হইতে অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। তাঁহার সারগর্ভ অভিমত পর পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হইল।
“কানাডাতে গ্রীষ্মের ছুটীর সময় বালকদিগকে, ভবিষ্যতে যে বৃত্তি সে অবলম্বন করিবে, তাহা হাতে কলমে শিক্ষা করিবার সুযোগ দেওয়া হয়। আমার মতে এই রীতি ভাল। ইহার ফলে সে সব দিক হইতে বিষয়টি শিখিতে পারে।
“আমি যখন যুবক ছিলাম, তখন গল্ফ বা বিলিয়ার্ড খেলা ছিল না। এবং ৩০ বৎসর বয়সে আমি যখন ‘সভ্যতার’ সংস্পর্শে আসিলাম, তখন আমি পুল বা গল্ফ খেলা জানিতাম না।”
যাঁহারা সামান্য অবস্থা হইতে স্বীয় চেষ্টায় জীবনের নানা বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়াছেন, এরূপ বহু ব্যক্তির দৃষ্টান্ত ইতিপূর্বে আমি দিয়াছি। চারজন প্রসিদ্ধ জননায়কের প্রথম জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়া আমি এই অধ্যায় শেষ করিব।