তাহারা শ্রমকে হেয় জ্ঞান করে। ভূতপূর্ব স্কুল সমূহের ইনস্পেক্টর মৌলবী আবদুল করিম এ সম্পর্কে ব্যথিত চিত্তে লিখিয়াছেন:—
“মফঃস্বল ভ্রমণের সময় বাখরগঞ্জ জেলার একটি স্কুল পরিদর্শন করিতে গিয়া আমি দেখি অর্থ ও ছাত্রাভাবে স্কুলটি উঠিয়া যাইবার উপক্রম। আমি স্থানীয় মাতব্বর লোকদের অনুরোধ করিলাম তাঁহারা যেন আমার সঙ্গে আমার নৌকায় গিয়া দেখা করেন। তাঁহারা গেলে, আমি তাঁহাদিগকে বুঝাইয়া বলিলাম যে স্কুলটি রক্ষার জন্য তাঁহাদিগকে অর্থ সাহায্য করিতে হইবে এবং ছেলেদের স্কুলে ভর্তি করিয়া দিতে হইবে। এই সময়ে আমি শুনিলাম একজন নিম্নস্বরে বলিতেছেন, স্কুলটি উঠিয়া গেলে তিনি হরিলুট দিবেন। ভদ্রলোকেরা চলিয়া গেলে, আমি স্থানীয় পুলিশের দারোগাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তাঁহারা স্কুলের উপর এমন বিরক্ত কেন দারোগা যাহা বলিলেন, তাহাতে আমি বুঝিতে পারিলাম, গ্রামের লোকদের স্কুলের উপর বিরক্ত হইবার যথেষ্ট কারণ আছে। স্থানটিতে অনেক ছোট ছোট দোকানদারের বাস। তাহারা চায়, তাহাদের ছেলেরা দোকানের জিনিষ বিক্রয় ও হিসাবপত্র রাখার কাজে সাহায্য করুক। কিন্তু যেই ছেলেরা স্কুলে ভর্তি হয়, অমনি তাহাদের ‘চাল’ বাড়িয়া যায় এবং এই ভাব দেখায় যে লেখা পড়া জানা লোকের পক্ষে দোকানদারী ছোট কাজ। এই ঘটনা হইতে এবং পরে আরও অনুসন্ধান করিয়া বুঝিতে পারিলাম যে, গ্রামে স্কুল থাকায় অনেক স্থলে কৃষকদের পক্ষে বিরক্তি ও অসুবিধার কারণ হইয়াছে। ‘গুরুর’ অনুরোধে ও বালকদের আগ্রহে অনেক সময় অনিচ্ছাসত্ত্বেও কৃষকরা ছেলেদের স্কুলে পাঠাইতে বাধ্য হয়। কিন্তু স্কুলে ঢুকিয়াই ছেলেরা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির হইয়া যায়। তাহাদের ধরণ ধারণ, অভ্যাস, রুচি সব বদলাইয়া যায়, এমন কি অনেক সময় নাম পর্যন্ত বদলাইয়া ফেলে।
“তাহাদের পিতামাতা কেবল যে তাহাদের নিকট হইতে গরু চরানো, চাষের কাজ ইত্যাদির সাহায্য হইতেই বঞ্চিত হয়, তাহা নহে, তাহাদের জন্য ভাল কাপড় চোপড়, ছাতা, বহি, খাতাপত্র ইত্যাদি যোগাইতে বাধ্য হয়। এই সব ব্যয় করা অনেক সময় তাহার সাধ্যাতীত। ফলে ছেলে পরিবারের বোঝা এবং সমাজের অভিশাপ স্বরূপ হয়। কেন না সে দলাদলি সৃষ্টি করে, মামলা মোকদ্দমা পাকাইয়া তোলে, এমন কি অনেক সময় জালজয়চুরীও শিখায়।” (Some Political, Economical & Educational Questions pp. 5-6)]। এরূপ অবস্থা প্রত্যেক দেশহিতকামী ব্যক্তিকে হতাশ করিয়া তুলিবে। আমাদের বুঝিবার সময় আসিয়াছে যে, যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলে গ্রামের উপর অবজ্ঞা জন্মে, সেগুলি দেশের পক্ষে কল্যাণকর নহে, বরং জাতীয় উন্নতির ঘোর শত্রু স্বরূপ।
(৫) আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটী—বিদেশী
ভাষা শিক্ষার বাহন হওয়াতে বিরাট শক্তির অপব্যয়
বাঙালী ছাত্রদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বিরাট শক্তির অপব্যয় হয়, তাহার কথা ভাবিলে স্তম্ভিত হইতে হয়। বালকের জীবনের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান ৫।৬ বৎসর কাল একটি দুরূহ বিদেশী ভাষা আয়ত্ত করিতেই ব্যয় করিতে হয়, কেন না ঐ ভাষার মধ্য দিয়াই তাহাকে অন্যান্য বিষয় শিখিতে হইবে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এরূপ অস্বাভাবিক ও ঘোর