পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
১৯৯

বাংলার “দ্বৈভাষিক শিক্ষা” সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ জনৈক শিক্ষাব্যবসায়ী এবিষয়ে নিম্নলিখিত অভিমত আমার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন।:—

বিদেশী ভাষা শিক্ষা পরে আরম্ভ করিতে হইবে

 “আমার বিশ্বাস, বিদেশী ভাষা শিক্ষায় এদেশে এত অধিক শক্তি ও সময় ব্যয় হওয়ার কারণ এই যে ছেলেমেয়েরা অতি অল্প বয়সেই বিদেশী ভাষা শিখিতে আরম্ভ করে। সাধারণের একটা ধারণা আছে যে, যত অল্প বয়সে বিদেশী ভাষা শিখিতে আরম্ভ করা যায়, ঐ ভাষা তত বেশী আয়ত্ত হয়। আট বৎসর বয়সের নীচে একথা খাটিতে পারে, ছোট শিশু একজন বয়স্ক লোকের চেয়ে শীঘ্র বিদেশী ভাষা মুখে মুখে শিখিয়া ফেলিতে পারে। কিন্তু এই অল্প বয়সে এরূপ দ্বৈভাষিক শিক্ষার ব্যবস্থায় মাতৃভাষা শিক্ষার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু যেখানে ছেলেমেয়েরা বাড়ীতে বিদেশী ভাষা শুনে না, অথবা যেখানে তাহারা ৮।৯ বৎসর বয়সে পাঠ্য বিষয় রূপে স্কুলে উহা পড়িতে আরম্ভ করে, সেখানে এই যুক্তি খাটে না। বিদেশী ভাষা শিক্ষা আরম্ভ করিবার উপযুক্ত সময় ১২ বৎসর হইতে ১৪ বৎসর বয়সের মধ্যে, কেননা ঐ বয়সে ছাত্রেরা প্রায় মাতৃভাষা আয়ত্ত করিয়া ফেলে, ব্যাকরণের মূল সূত্র জানিতে পারে এবং কোন বিষয় অধ্যয়ন করিবার উপযুক্ত মনের বিকাশ তাহাদের হয়। বিশেষতঃ, ১৪ বৎসর বয়স হইলে, বুঝিতে পারা যায়, ছেলেমেয়েদের মধ্যে কাহাদের বিদেশী ভাষা শিক্ষার যোগ্যতা আছে, অথবা ঐ ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না।

 “বর্তমানে আমরা অসংখ্য ছাত্রকে ইংরাজী শিখাইয়া থাকি,—উহাদের মধ্যে অনেকের পক্ষে ঐ ভাষা কোন প্রয়োজনেই লাগিবে না। অনেকের ঐ ভাষা আয়ত্ত করিবার মত মেধা নাই। ছাত্র সংখ্যাও এত বেশী যে, আমরা প্রয়োজনানুরূপ যোগ্য শিক্ষক পাই না। সুতরাং শিক্ষা ভাল হয় না। ক্লাসের ছাত্র সংখ্যার উপরে ভাষা শিক্ষা বহুল পরিমাণে নির্ভর করে। ছেলেরা কথাবার্তার মধ্য দিয়াই ভাষা শিখে। যে ক্লাসে ৬০ জন ছাত্র আছে, সেখানে প্রত্যেক ছাত্র গড়ে এক মিনিটের বেশী কথা বলিতে পারে না; উহার মধ্যে শিক্ষক যদি আধ মিনিট কথা বলেন, তবে প্রকৃত পক্ষে প্রত্যেক ছাত্র গড়ে আধ মিনিট কথা বলিতে পারে। আমার বিবেচনায়, ২৫ জনের বেশী ছাত্র কোন ক্লাসে থাকিলে, বিদেশী ভাষায় কথাবার্তা বলার কোন ভাল ব্যবস্থা হইতে পারে না, তাহাও যদি শিক্ষকের দক্ষতা থাকে। সেই রূপ, লিখিতে অভ্যাস করিয়াই লেখা শিখে। কিন্তু ভুল সংশোধন ব্যতীত লেখার কোন মূল্য থাকে না। ক্লাসের ছাত্র সংখ্যা যদি কম না হয় এবং ছাত্র নির্বাচনের ব্যবস্থা যদি না থাকে, তাহা হইলে ছাত্রদের লেখা খাতা এত বেশী হয়, যে তাহা সংশোধন করিবার সময় শিক্ষকের থাকে না। বিশেষতঃ নিকৃষ্ট ছাত্রেরা এত বেশী ভুল লিখে যে, তাহা সংশোধন করিতেই শিক্ষকের অনেক বেশী সময় অপব্যয় হয়। আমার বিশ্বাস, এদেশে শিক্ষা সংস্কারের একটা প্রথম ও প্রধান উপায় মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। যে সমস্ত ছাত্র এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইবে, কেবল তাহাদিগকেই ইংরাজী বলিতে ও লিখিতে শিখানো হইবে।”

(৬) বিশ্ববিদ্যালয়ের যথার্থ কার্য

 কেহ কেহ মনে করিতে পারেন যে, আমি সাধারণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার বিরূদ্ধেই প্রচার করিতেছি। আমার উদ্দেশ্য মোটেই সেরূপ নয়। আমাদের যুবকদের