এই শিল্প এক ভাবেই ছিল এবং কিছুদিন পূর্বে পাশ্চাত্যদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ইহা লুপ্ত হইয়া গিয়াছে।[১]
ইয়োরোপে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান শিল্পকার্যে নিয়োজিত হইবার জন্য ধাতু শিল্পে আশ্চর্য রকমের উন্নতি হইয়াছে। প্রায় বর্তমানে ‘বেসেমারের’ প্রণালীতে এক এক বারে ২০ টন ইস্পাত উৎপন্ন হয়। প্রত্যহ নূতন নূতন উন্নত প্রণালী উদ্ভাবিত হইতেছে। ক্রোমিয়াম, টাংষ্টেন এবং ভ্যানাডিয়াম ইস্পাতের সঙ্গে মিশ্রিত করিবার ফলে কামান ও মোটরকার নির্মাণ সম্পর্কে ইস্পাত শিল্পে যুগান্তর হইয়াছে। গে-লুসাক, গ্লোভার্স টাওয়ার্স এবং ‘কনট্যাক্ট’ প্রণালী আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপাদনের পরিমাণ বহু গুণে বাড়িয়া গিয়াছে।
বর্তমান রবার শিল্পের কথাও উল্লেখ করা যাইতে পারে। টায়ার নির্মাণ প্রভৃতি কার্যে রবারের চাহিদা বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রবারের উৎপাদনের পরিমাণও বাড়িয়া গিয়াছে। কাঁচামাল হইতে ‘ভাল্কানাইজ্ড’ রবার প্রস্তুত করিতে নানাবিধ রাসায়নিক প্রণালী অবলম্বন করিতে হয়। জার্মানীর রংএর কারখানাসমূহের কথা উল্লেখ করা বাহুল্য মাত্র। ইহার এক একটি কারখানাতে ২৫০ শতেরও অধিক রাসায়নিক নিযুক্ত আছেন। আমি কিছুদিন পূর্বে (১৯২৬) ডার্মষ্টাডে মার্কের কারখানা দেখিয়া আসিয়াছি। ঐ কারখানার বিরাট কার্য দেখিয়া আমি স্তম্ভিত হইয়াছিলাম। কিন্তু গবেষণা বিভাগ দেখিয়াই আমি বেশী মুগ্ধ হইয়াছিলাম। এখানে প্রসিদ্ধ বিশেষজ্ঞগণ কেবল যে নূতন নূতন ঔষধ তৈরী করিতেছেন, তাহা নহে, তাহার ফলাফলও পরীক্ষা করিতেছেন।
আমেরিকা, ইংলণ্ড ও ইয়োরোপের বৈদ্যুতিক কারখানাগুলির কথাও উল্লেখযোগ্য। বার্ষিক যে সমস্ত যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক দ্রব্যাদি তাহারা তৈরী করে, তাহার মূল্য কয়েক শত কোটী টাকার কম হইবে না। এখানেও, বর্তমান শিল্প কারখানার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণা মিলিত হওয়াতে এরূপ বিরাট উন্নতি সম্ভবপর হইয়াছে।
লর্ড মেলচেট আন্তরিক বিশ্বাস করিতেন “রাসায়নিকেরা বর্তমান জগতের আর্থিক ও শিল্পসম্বন্ধীয় সমস্যার সমাধান করিবেন।”
“আমাদের ব্যবসায়ের প্রত্যেক অঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত যুবকদের প্রয়োজন আছে।......সমস্ত ব্যবসায়েই বৈজ্ঞানিক প্রণালীর প্রবর্তন করিতে হইবে।” “গ্রেট ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উৎসাহ দিতে হইবে এবং ঐ উপায়ে যে সমস্ত
- ↑ “দিল্লীর স্তম্ভ যে লৌহ দ্বারা নির্মিত, স্যার রবার্ট হ্যাড্ফিল্ড তাঁহার কারখানায় উহা বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা করেন। এই স্তম্ভ এক হাজার বৎসর পূর্বে নির্মিত হইয়াছিল বলিয়া প্রসিদ্ধ। স্যার রবার্ট বলেন, পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে যে, এই লৌহ অতি আশ্চর্য রকমের বস্তু। ইহাতে এমন কোন বিশেষ গুণ নিশ্চয়ই ছিল, যাহার ফলে এই এক হাজার বৎসর ইহা টিকিয়া আছে, কোনরূপ মরিচা পড়ে নাই; বর্তমান যুগে যে সমস্ত লৌহ প্রস্তুত হয়, তাহা অপেক্ষা উহা শ্রেষ্ঠ। * * *
“বর্তমান বৈজ্ঞানিক যুগে ধাতু শিল্প সম্বন্ধে প্রভূত উন্নতি হইলেও, দিল্লীর স্তম্ভের লৌহ এখনকার কারখানায় প্রস্তুত লৌহ অপেক্ষা অনেক গুণে শ্রেষ্ঠ। তিনি বৈজ্ঞানিকের দায়িত্ব জ্ঞান লইয়াই এই কথা বলিয়াছেন। ধাতু শিল্পের কতকগুলি গূঢ় রহস্য লুপ্ত হইয়াছে।” (মৎপ্রণীত Makers of Modern Chemistry.)
এই স্তম্ভ সম্বন্ধে রস্কো ও শোর্লেমার তাঁহাদের রসায়ন সম্বন্ধীয় গ্রন্থে লিখিয়াছেন— “বর্তমান যুগে আমাদের বৈজ্ঞানিক কারখানার বাষ্পীয় শক্তি দ্বারা চালিত বড় বড় হাতুড়ী ও রোলার দ্বারাও এরূপ প্রকাশনা লৌহ পিণ্ড তৈরী করা কঠিন। হিন্দুরা হাতে কাজ করিয়া কিরূপে এরূপ বিশাল লৌহপিণ্ড তৈরী করিয়াছেন, তাহা আমরা বুঝিতে অক্ষম।”