বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ছিলেন এবং কোলবে ও বুনসেনের নিকট রসায়ন বিদ্যা অধ্যয়ন করেন। তিনি তাঁহার বন্ধু জন টি, ব্রুনারের অংশীদার রূপে ব্যবসায়ে প্রবেশ করেন। ব্রুনার মেসার্স হাচিনসনের রাসায়নিক কারবারের কর্তা ছিলেন।
কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নালে (১৯৩১) লিখিত হইয়াছে:—
“১৮৭৩—১৮৮১ সাল পর্যন্ত আট বৎসর ব্যবসায়টিকে নানা বিঘ্ন বিপত্তির মধ্যে কঠোর সংগ্রাম করিতে হইয়াছিল; কেবল অংশীদার দুইজনের প্রতিভা, দৃঢ় সঙ্কল্প এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই সাফল্য লাভ হইয়াছিল।
“এইরূপে জীবনের ষোল বৎসর কাল ধরিয়া তরুণ আলফ্রেড মণ্ড তাঁহার চোখের সম্মুখে একটি বৃহৎ ব্যবসায়কে গড়িয়া উঠিতে দেখিয়াছিলেন, এবং বৈজ্ঞানিক কর্মশালার আবহাওয়ার মধ্যে তিনি বাস করিয়াছিলেন।”
ইয়োরোপ ও আমেরিকাতে ব্যবসায়ের ক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত যুবকদের পক্ষে কিরূপ সীমাবদ্ধ, তাহা আমি দেখাইয়াছি। আমাদের দেশে, আবার ততোধিক বিপুল বাধা বিঘ্নের সঙ্গে সংগ্রাম করিতে হয়। সাধারণ ইয়োরোপীয় বা আমেরিকান, গ্রাজুয়েটের সাহস, কর্মোৎসাহ এবং সর্বপ্রকার বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়া জয়লাভের জন্য দৃঢ় সঙ্কল্প আছে, কিন্তু ভারতীয় গ্রাজুয়েটদের চরিত্রে ঐ সব গুণ নাই। আমাদের রাসায়নিক কারখানায় প্রায় ৬০ জন বিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট আছে। তাহারা তাহাদের দৈনন্দিন নির্দিষ্ট কাজ বেশ চালাইতে পারে। কিন্তু তাহারা নিজের চেষ্টায় বা কর্মপ্রেরণায় প্রায়ই কিছু করিতে পারে না।
বর্তমানে বাংলা দেশে আমাদের একটি গুরুতর সমস্যা উপস্থিত। বাঙালীকে তাহার কৃষিজাত দ্রব্য যথা পাট, শস্য, তৈল-বীজ, প্রভৃতি বিক্রয়ের জন্য অবাঙালীর উপর নির্ভর করিতে হয়। সুতরাং তাহাদের পক্ষে ব্যবসায়ে সাফল্য লাভ করা কঠিন। কেননা, তাহা করিতে হইলে তাহাদিগকে (বাঙালীকে) কেবল যে উচ্চাঙ্গের বৈজ্ঞানিক ও শিল্প সম্বন্ধীয় জ্ঞান লাভ করিতে হইবে, তাহা নহে; ব্যবসায় পরিচালনার বিশেষ ক্ষমতাও থাকা চাই এবং এই শেষোক্ত গুণটি দুর্ভাগ্যক্রমে বাঙালীদের চরিত্রে এখনও বিকাশ লাভ করে নাই। সে ব্যবসায় পত্তনের জন্য মূলধন সংগ্রহ করিতে পারে না, সে এখনও এমন কোন প্রতিষ্ঠাবান্ ব্যাঙ্ক স্থাপন করিতে পারে নাই, যাহার নিকট হইতে আর্থিক সহায়তা লাভ করিতে পারে। বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প বিদ্যালয়গুলি অসংখ্য গ্রাজুয়েট বা ডিপ্লোমাধারী সৃষ্টি করিতেছে। শিক্ষাব্যবসায়েও যথেষ্ট লোকের ভিড়। সুতরাং শিক্ষিত যুবকদের জীবিকা সমস্যা কিরূপে সমাধান করা যায়, সেই চিন্তাই আমাদের পক্ষে গুরুতর হইয়া উঠিয়াছে।[১]
পূর্বোক্ত আলোচনা হইতে আমরা একটা সুস্পষ্ট শিক্ষা লাভ করিতে পারি। কোন নির্দিষ্ট কাজে বা চল্তি কারবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত যুবকেরা অনেক সময় বেশ
- ↑ ১৯৩০ সালের ২৭শে আগষ্ট তারিখে, বোম্বাই সহরে শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন উপলক্ষে, আমি বলিয়াছিলাম;—“১৬ বৎসর পূর্বে মডার্ণ রিভিউয়ের প্রবীণ সম্পাদক আমাকে ‘ডক্টরদের ডক্টর’ উপাধি দিয়াছিলেন। তাঁহার অভিপ্রায় ছিল এই যে আমি বহু বৈজ্ঞানিক ‘ডক্টরের’ সৃষ্টি করিয়াছি। এখন আমি হতভম্ভের ন্যায় দেখিতেছি যে, বৎসরের পর বৎসর কেবল যে আমার লেবরেটরী হইতেই অসংখ্য ‘ডক্টরের’ সৃষ্টি হইতেছে তাহা নহে, আমার পুরাতন ছাত্রেরা—কলিকাতা, ঢাকা, এলাহাবাদ, লাহোর প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রূপে অসংখ্য ‘ডক্টর’ সৃষ্টি করিতেছেন। বস্তুতঃ যদি আমার রাসায়নিক শিষ্য ও অনুশিষ্য ‘ডক্টর’দের একটি তালিকা প্রস্তুত করা যায়, তবে তাহা সত্যই বিস্ময়কর হইবে। কিন্তু তবু রাসায়নিক শিল্প সম্বন্ধে আমরা ভারতবাসীরা শিশুর মতই অসহায়!”