পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একবিংশ পরিচ্ছেদ

দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান

 বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যাণ্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কসের উৎপত্তি সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণ অন্যত্র দেওয়া হইয়াছে। আমি এখন আরও কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস বিবৃত করিব। এগুলির সঙ্গেও আমি ঘনিষ্ঠ ভাবে সংসৃষ্ট। এই দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে কিরূপে বাধাবিঘ্ন ও অসুবিধার মধ্য দিয়া কাজ করিতে হইয়াছে, তাহাও আমি দেখাইতে চেষ্টা করিব।

(১) কলিকাতা পটারী ওয়ার্কস্ ও তাহার ইতিহাস

 কলিকাতা পটারী ওয়ার্কসের উৎপত্তি ও ইতিহাস কৌতূহলোদ্দীপক। ১৯০১ সালে জনৈক ভদ্রলোক সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত রাজমহলের মধ্যে মঙ্গলহাট নামক স্থানে পোর্সিলেন ও মৃৎ-শিল্পের উপযোগী চীনামাটী আবিষ্কার করেন। ইহার ফলে, কাশিমবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, বৈকুণ্ঠনাথ সেন এবং হেমেন্দ্রনাথ সেন একটি প্রাইভেট কোম্পানী গঠন করেন। হেমেন্দ্রবাবু যখন কলিকাতায় আসিয়া হাইকোর্টে ওকালতী ব্যবসায় সুরু করেন, তখন কলিকাতাতেই কলিকাতা পটারী ওয়ার্কসের কাজ আরম্ভ হয়। একটি পুকুরের ধারে কয়েকটি কুটীর লইয়া সামান্য আকারে ইহার পত্তন হয়। কয়েক জন কুম্ভকারকে এই কার্যে নিযুক্ত করা হয়।

 সেই সময়ে মৃৎ-শিল্পে বিশেষজ্ঞ কাহাকেও পাওয়া যায় নাই। শ্রীযুক্ত নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামক একজন ভদ্রলোক মৃৎ-শিল্পের কাজ কিছু কিছু জানিতেন, তিনিই নূতন শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাইবার ভার গ্রহণ করেন। নারায়ণবাবু অনেকগুলি চুল্লী নির্মাণ করেন এবং কৃষ্ণনগরের কয়েকজন কারিগরের সাহায্যে মাটীর খেলনা ও পুতুল তৈরী করিতে থাকেন। কিন্তু তাঁহার কোন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ছিল না, সুতরাং তাঁহার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বাজারে বিক্রয়ের উপযোগী কোন জিনিষ তিনি তৈরী করিতে পারেন নাই। এইরূপ নিষ্ফল পরীক্ষায় প্রায় ২৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

 এই শিল্পের প্রধান কাঁচা মাল চীনা মাটী। সেইজন্য কোম্পানীর মালিকগণ পাহাড় অঞ্চল হইতে প্রচুর পরিমাণ চীনামাটী উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিলেন। ঐ উদ্দেশ্যে মঙ্গলহাটে যন্ত্রপাতিও বসানো হইল। ২০ অশ্বশক্তি বয়লারটি পাহাড়ের উপরে লইয়া যাইতে বিশেষ বেগ পাইতে হইয়াছিল। অবশেষে ইঞ্জিন ও বয়লার বসানো হইল এবং প্রচুর পরিমাণে চীনামাটী তৈরীর ব্যবস্থা হইল। ইতিপূর্বে শ্রীযুত সত্যসন্দর দেবকে জাপানে পাঠানো হয়। তিনি টোকিও এবং কিওটোর শিল্পবিদ্যালয়ে মৃৎ-শিল্প শিক্ষা করিয়া ১৯০৬ সালের আরম্ভে দেশে ফিরেন। তাঁহার উপরেই কাজের ভার দেওয়া হয়।

 তিনি কিছুকাল কাজ করেন। তখন দেখা গেল যে, ব্যবসায়টির ভবিষ্যৎ প্রসারের আশা আছে, কিন্তু জায়গাটি তাহার তুলনায় অত্যন্ত ক্ষুদ্র। সুতরাং মালিকেরা স্থির করেন যে ব্যবসায় বাড়াইতে হইবে এবং আরও বেশী পরিমাণ পোর্সিলেনের দ্রব্য তৈরী