পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একবিংশ পরিচ্ছেদ
২২৭

করিতে হইবে। এই উদ্দেশ্যে বেলেঘাটা রেলওয়ে ষ্টেশনের নিকটে ৪৫নং ট্যাংরা রোডে তিন একর জমি ইজারা লওয়া হয়। এইস্থানে প্রয়োজনীয় কলকব্জা বসানো এবং কারখানা গৃহ নির্মিত হয়। চুল্লী তৈরী হইলে ১৯০৭ সালে উন্নততর বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে কাজ আরম্ভ হয়। কিন্তু সুদক্ষ কারিগর না থাকাতে কাজের কোন উন্নতি দেখা যায় না। জাপান হইতে দুইজন ভাল কারিগর আনিবার জন্য শ্রীযুত দেবকে জাপানে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল যে, জাপানী করিগরেরা এখানকার লোকদের কাজ শিখাইয়া যাইবে। ১৯০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাপানী কারিগরেরা এদেশে আসে এবং এক বৎসর সন্তোষজনকভাবে কাজ করে। তারপর তাহাদের দেশে পাঠান হয়। এই কারিগরদের বেতন, যাওয়া আসার খরচ ইত্যাদি বাবদ মালিকদিগকে প্রায় দশ হাজার টাকা ব্যয় করিতে হয়। ব্যবসায়ে ক্রমে উন্নতি হইতে লাগিল এবং মালিকেরা আরও মূলধন দিতে লাগিলেন।

 কিন্তু বাজারে সস্তা জাপানী ও জার্মান মাল আমদানী হওয়ার দরুণ, তাহাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দেশী মাল চালান কঠিন হইয়া উঠিল। সুতরাং ১৯১৩ সালে শ্রীযুত দেবকে আধুনিকতম পোর্সিলেন ও মৃৎ-শিল্প প্রস্তুত প্রণালী শিক্ষা করিবার জন্য জার্মানীতে প্রেরণ করা সমীচীন মনে হইল। এরপও স্থির হইল যে, শ্রীযুত দেব উন্নত ধরণের কলকব্জা ক্রয় করিবেন এবং ইংলণ্ড ও ইয়োরোপে বিবিধ মৃৎ শিল্পের কারখানাও দেখিয়া আসিবেন। শ্রীযুত দেব এদেশে প্রাপ্তব্য কাঁচা মালের নমুনা সঙ্গে লইয়াছিলেন। তিনি ইয়োরোপের কয়েকটি লেবরেটরী ও কারখানাতে এই দেশীয় কাঁচা মাল পোর্সিলেন ও মৃৎ-শিল্প নির্মাণের পক্ষে কতদূর উপযোগী, তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখেন। তিনি প্রয়োজনীয় কলকব্জা এবং উন্নত ধরণের চুল্লী তৈরীর জন্য মালমশলার অর্ডার দিয়া দেশে প্রত্যাবর্তন করিলেন। এই সমস্ত জিনিষ মহাযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্বেই এদেশে পৌছিয়াছিল। জার্মান ড্রেসডেন মডেলের নূতন চুল্লীও নির্মিত হইল। সমস্ত প্রয়োজনীয় কলকব্জা বসানো হইল, যে জমির উপর কারখানা স্থাপিত, মালিকেরা তাহা ক্রয় করিলেন এবং পূর্ণোদ্যমে কাজ আরম্ভ হইল।

 ১৯০৬ হইতে ১৯১৬ পর্যন্ত দশ বৎসরের বিবরণীতে দেখা যায় যে, ২,০২,৯৫২ টাকা মূল্যের জিনিষ উৎপন্ন হইয়াছিল। এবং তন্মধ্যে ১,৯২,৮২৭ টাকা মূল্যের জিনিষ বিক্রয় হইয়াছিল, ঐ সময় পর্যন্ত মালিকেরা ব্যবসায়ের জন্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা ব্যয় করিয়াছিলেন। ১৯১৬—১৭ সালের জন্য যে বাজেট প্রস্তুত হয়, তাহাতে ম্যানেজার মিঃ দেব আরও কাজ বাড়াইবার প্রস্তাব করেন এবং তদুদ্দেশ্যে ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে আরও ২ ১/২ লক্ষ টাকা দিবার জন্য মালিকদিগকে অনুরোধ করেন। কিন্তু মালিকেরা কতকটা নৈরাশ্য বোধ করিতেছিলেন। তাঁহারা বহু অর্থ ব্যয় করিয়াও দীর্ঘ কালের মধ্যে কোন ফল পান নাই। সুতরাং তাঁহারা ব্যবসায়টিকে লিমিটেড কোম্পানীতে পরিণত করিতে মনস্থ করিলেন। এই উদ্দেশ্যে তাঁহারা একটি ইয়োরোপীয় কোম্পানীর নিকট প্রস্তাব করিলেন এবং উক্ত কোম্পানীও ঐ প্রস্তাব গ্রহণে সম্মত হইলেন। মিঃ এইচ, এন, সেন এবং ফার্মের সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরিয়া সর্ত্তাদি লইয়া আলোচনা চলিল, কিন্তু কোন কারণে শেষ পর্যন্ত কিছুই স্থির হইল না।

 তারপর, ১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে, কলিকাতা পটারী ওয়ার্কসের ব্যবসায়টিকে “বেঙ্গল পটারিজ লিমিটেড” এই নাম দিয়া দশ লক্ষ টাকা মূলধনসহ লিমিটেড কোম্পানীতে পরিণত করা হইল।

 নূতন কোম্পানী ড্রেসডেন টাইপের আরও তিনটি চুল্লী বসাইবার প্রস্তাব করিলেন। তাঁহাদের আশা ছিল যে, ইহার ফলে ৪,২০,০০০ টাকা মূল্যের জিনিষ উৎপন্ন হইবে।